Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কাদের হাতে বন্দি আমাদের জীবন?

বাস থেকে হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায়

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ ২০২৪

তকাল বুধবার (৬ মার্চ) দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণায় জানিয়েছে, দেশের ব্যক্তিমালিকাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে চাঁদাবাজি ও অনিয়ম করে বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এ খবরে স্তম্ভিত হয়ে গেছে দেশের জনগণ। প্রতিটি পত্রিকাই খবরটি বড় করে ছেপেছে। এতেই এর গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বোঝা যায়।

এই বিপুল অঙ্কের চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অর্থ কারা পায়, তাও গবেষণায় জানা গেছে। ২৫ কোটি টাকা তোলা হয় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর জন্য, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তুলে থাকেন ৩৩ কোটি, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ তোলে ৮৭ কোটি, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বাস টার্মিনাল থেকে তোলে ১৩ কোটি টাকা। চাঁদা বা অনিয়ম করে তোলা অর্থের সবচেয়ে বড় অংশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) দিতে হয়। বাসের নিবন্ধন ও সনদ গ্রহণ এবং হালনাগাদ বাবদ ঘুষ হিসেবে দিতে হয় ৯০০ কোটি টাকার বেশি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘চাঁদাবাজির এই হিসাব খুব কম করে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয়।’

এসব দেখে আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা কোন লুটের দেশে বাস করি? অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা একদিকে যেমন লুটেরাদের পকেটে ঢুকছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের পকেট খালি হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় চাঁদা দিতে হয় বলে বাস মালিকরা সেসব আদায় করেন সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। শুধু যে টাকা দিয়েই মুক্তি তাও নয়, অনেক সময় দেখা দেয় জীবনসংশয়। কারণ, ঘুষ দিয়ে বাস মালিক, ড্রাইভাররা ফিটনেসবিহীন অকেজো নষ্ট গাড়ি পথে নামান। অতিরিক্ত টাকা খরচের জন্যও তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। এক ক্ষেত্রে অনিয়ম সবক্ষেত্রেই অনিয়মের জন্ম দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বাস মালিকের ৮০ ভাগই রাজনৈতিক নেতা। দুর্নীতির মাধ্যমে নিবন্ধনহীন বাস পথে নামাতেও তারা দ্বিধা বোধ করেন না। অদক্ষ চালক নিয়োগসহ, নির্ধারিত শ্রমমজুরি থেকেও বঞ্চিত করা হয় পরিবহন-শ্রমিকদের। তার মানে আমাদের জীবন আসলে একটা বেপরোয়া বিশৃঙ্খলার হাতে বন্দি। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি রোধ ছাড়া এ থেকে মুক্তির আর কোনো উপায় নেই।

এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি করপোরেশন, সড়ক পরিবার মন্ত্রণালয়, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সড়ক নিরাপদ না হলে কারও জীবনই নিরাপদ নয়। আর সড়কের নিরাপত্তার জন্য প্রাথমিক শর্ত দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদামুক্ত, ঘুষমুক্ত পরিবহন-ব্যবস্থা তৈরি করা। এ ব্যাপারে অমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এরকম একটি জরুরি ইস্যুতে চুপ থাকা হবে মরণঘাতী ব্যাপার।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ