Views Bangladesh Logo

ঈদকে সামনে রেখে কোটি টাকার মেহেদি পাতার ব্যবসা

ঢাকা জেলার অন্তর্গত কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল বাশার ১০ বিঘা জমিতে মেহেদি চাষ করেছেন। এতে তার সর্বসাকল্যে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। তবে, ঈদের আগে তিন থেকে চার দিনে এই মেহেদি পাতা বিক্রি করে তার আয় হবে লক্ষাধিক টাকা। তিনি জানান, শ্রমিকের মজুরি, জমি তৈরির খরচ ও কীটনাশকসহ সব খরচ বাদ দিলেও রোজার এক মাসে মেহেদি পাতা বিক্রি করে অন্তত ৩ লাখ টাকা লাভ করবেন তিনি। গত বছরও এরকমই লাভ করেছিলেন তিনি।

বাশার বলেন, প্রতি বিঘাতে ৪-৫ হাজার মেহেদির চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর পরিচর্যা করলে ৭ থেকে ৮ বছর পর ফলন পাওয়া যায়। তবে শীতে মেহেদি পাতার উৎপাদন কম হয়। বছরে ৫ বার বাম্পার মেহেদি পাতা বিক্রি করা যায়। এ ছাড়াও সারা বছর ধরেই হালকা-পাতলা বিক্রি করেন বলে তিনি জানান।

একসময় মেহেদি চাষের জন্য এই কলাতিয়া ইউনিয়নের খ্যাতি ছিল দেশজুড়েই। কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য এখন হারাতে বসেছে। এর অন্যতম কারণ চাষের জমি কমে যাওয়া। চাষের জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ হওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে মেহেদি চাষের ঐতিহ্য।

বাশার বলেন, মেহেদি চাষ করে পাকা বাড়ি করেছি এবং সংসার চলছে। শ্রমিকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে বেশ চলে যাচ্ছে। এক সময় আমাদের কলাতিয়া ইউনিয়ন ‘মেহেদি ইউনিয়ন’ নামেই পরিচিত ছিল।

আবুল বাশারের সঙ্গে কথা হয় রায়ের বাজার পাইকারি মহলে। রাজধানীর রায়ের বাজার হচ্ছে মেহেদি পাতার বড় পাইকারি মার্কেট। এখান থেকেই খুচরা বিক্রেতারা মেহেদি কিনে রাজধানীর ছোট-বড় বাজারসহ পাড়া মহল্লায় ভ্যানে বিক্রি করার জন্য মেহেদি নিয়ে যায়।

খুচরা বিক্রেতা জসিম মালু জানালেন, রাজধানীজুড়েই মেহেদি পাতার চাহিদা আছে। ইদানীং মাথার চুলে ও দাড়িতে এই মেহেদি পাতা বেটে দেয়ার চল শুরু হয়েছে। রোজার সময় মাসজুড়েই মেহেদি পাতা বিক্রি হয়। তবে, চাহিদা বাড়ে সাতাশ রোজার পর থেকে। এখানেই কথা হয় সাভারের মেহেদি চাষি কলি শেখের সঙ্গে। বাণিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষ করে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসি বাহেরচর গ্রামের অর্ধশত কৃষক।

তিনি বলেন, মেহেদি চাষ করেই অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। মেহেদি পাতা বেচেই বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করছেন তারা। জানা গেল, গত ১৫ বছর ধরে এই গ্রামে মেহেদি চাষ হচ্ছে। গ্রামের ৫০ জন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ২০০ বিঘা জমিতে মেহেদি পাতা চাষ করেন।

রায়ের বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার বান্ডিল মেহেদি পাতা আসে। একেক বান্ডিল বিক্রি হয় ৫০-৮০ টাকায়। কলি শেখ বলেন, মেহেদি পাতার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে কারণ মানুষ টিউব মেহেদির ব্যবহার কমাচ্ছেন। মাথার চুলেও মেহেদি পাতার ব্যবহার বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন দিন দিন বাজারে মেহেদি পাতার চাহিদা বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রচার-প্রচারণাসহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জেলাতেও মেহেদি চাষ করা সম্ভব। মেহেদি পাতার উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কলি শেখ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ