Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ঢাকায় কাকের বাসা বানানোর জায়গা দরকার

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

ক সময় ঢাকাবাসীর ঘুম ভাঙত কাকের ডাকে। ভোর হতেই বাড়ির ছাদে, কার্নিশে, গাছে, রাস্তার ইলেকট্রিক খুঁটিতে, তারে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে বসত কালো কাক। পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে কালো; কিন্তু মানুষের জন্য খুব উপকারী এই পাখিটিকে বলা হয় শহরের জাতীয় পাখি। শহরাঞ্চলে অন্যান্য পাখির আনাগোনা না থাকলেও কাকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক সময় কর্কশ স্বরে ডাকাডাকি করে তারা কান ঝালাপালা করে দিত; কিন্তু এখন ঢাকা শহরে কাক প্রায় চোখে পড়ে না বললেই চলে। দাঁড়কাক তো হারিয়ে গেছে সেই কবেই, এখন হারাতে বসেছে পাতি কাকও।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন, মানুষের আধিক্যের কারণে ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে কাকের বাস্তুসংস্থান। ফলে দিন দিন শহরে কমছে কাকের সংখ্যা। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বণ্যপ্রাণী গবেষক সীমান্ত দীপু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাকের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। আরও একটা কারণ হচ্ছে খাদ্যভাস। নগরায়ণের ফলে কাকের খাবারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

আমাদের দেশে যে পরিমাণ পোলট্রি খামার বেড়েছে, তা আগে ছিল না। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব পোলট্রি মুরগি মারা যায়। অনেকেই এসব যত্রতত্র ফেলে দেয়। এবং সেগুলো খাবার অন্য প্রাণীর মতো কাকও খেয়ে থাকে। এসব রোগাক্রান্ত মুরগি কাক খাওয়ার ফলে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসব কারণেও দলে দলে কাক মারা যাওয়ার রেকর্ড আছে। যদি এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণিত হয়নি। তবে আমরা কিছু জায়গায় প্রমাণ পেয়েছি।

এই গবেষক আরও বলেন, শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে যারা কাজ করেন, তাদের চেয়েও কাক এক সময় শহর বেশি পরিচ্ছন্ন রাখত। কাক কমে যাওয়ার ফলে এসব উচ্ছিষ্ট খাবার কুকুরের খাবারে পরিণত হয়েছে। ফলে কুকুরের বংশ বিস্তার বাড়ছে। মানুষ কুকুর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কাক যদি টিকে থাকার সুযোগ পেতো, তাহলে এই অতিরিক্ত ব্যয় হয়তো সরকারকে করতে হতো না।

উপরোল্লেখিত কারণটি থেকেই বোঝা যায় কাক একটি শহরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাক শুধু শহর পরিষ্কার রাখে না, কাক প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। সেই কাক হারিয়ে যাওয়া শুধু দুঃখজনক নয়, প্রকৃতির জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

কাক সাধারণত বাসা বানায় ‍উঁচু বড় বড় গাছে, সেসব গাছের অভাব কাকের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শহর কাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের নিরাপদে বসার জায়গা নেই। এখন কাকের অন্যতম বসার জায়গা হচ্ছে কারেন্টের তার, বিদ্যুতের লাইন, ডিশ এন্টেনার লাইনগুলো। এসব তো কাকের বসার জায়গা না। এগুলো নির্দেশ করছে শহরে আসলে কাকের বসার মতো জায়গা নেই।

বিশ্রাম নেয়ার মতো গাছ নেই। আবাসস্থলের অভাব আছে। মানে ডিম ফোটানোর মতো যে বাসা দরকার সে বাসাটুকু তৈরি করার মতো কোনো জায়গা বা গাছ নেই। তাই কাক বাঁচাতে শহরের নাগরিক ও সরকার উভয়কেই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শুধু কাক নয়, আমরা চাই শহরে সব প্রজাতির পাখিরই আনাগোনা বাড়ুক। পাখি আকাশে উড়ছে, তার মানে সেই স্থান এখনো নিরাপদে আছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ