কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন, লড়াই হবে সাক্কু-সূচনার মধ্যে
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে চারজন প্রার্থী হলেও শেষ মুহূর্তে নির্বাচনি হিসেব-নিকেশ অনেকটা পাল্টে গেছে। এত দিন চার বা তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও এখন তা পাল্টে গেছে। এবার কুমিল্লার মেয়র পদে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে এ লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন কুমিল্লার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করছেন, নির্বাচনের শুরুতে অনেকে চর্তুমুখী বা দ্বিমুখী লড়াইয়ের কথা আশঙ্কা করলেও এখন তা মূল দুই প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক চৌধুরী ও কুমিল্লা সদর-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সূচনার মধ্যেই লড়াইটা সীমাবদ্ধ থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, যারা সত্যিকারার্থে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পরিবর্তন চান তারা এ দুজনেই আটকে গেছেন। মুনিরুল হক সাক্কুর জনপ্রিয়তার কাছে তারই দল বিএনপির অপর প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের অবস্থান এতটা উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। ভোটারদের মাঝে সাক্কু আর নিজামের জনপ্রিয়তার ব্যবধান অনেক বেশি। তাই আওয়ামী লীগের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বিরোধী ঘরানার ভোটাররা সাক্কুতেই আস্থা রখেবেন বেশি। কারণ তাদের ধারণা নির্বাচনি কৌশল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ বিরোধীদের কাছে সাক্কুই বিকল্প।
অপরদিকে যারা বিএনপি ঘরানার বাইরে রয়েছেন তারা ডা. তাহসিন বাহার সূচনাতেই আস্থা রাখছেন। মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কথা নয় আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির বাইরে অবস্থান করায় নেতাকর্মীদের সাথে তার দূরত্ব বেড়েছে, সেই সাথে কমেছে গুরুত্বও। জনপ্রিয়তার বিশ্লেষণ করলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কুর সাথে তার টিকে থাকারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এবারের নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম মাইকিং, পোস্টারিং করেছেন। যদিও তানিম বলছেন, ‘আমার পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে’।
সব দিক বিবেচনা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এবারের উপনির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু এবং ডা. তাহসীন বাহার সূচনার মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
আসন্ন এ উপনির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও মাঠে থাকবেন ৩৬ জন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর পাশাপাশি জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি মনিটরিং টিম নগরীর ১০৫টি কেন্দ্র পরিদর্শনে মাঠে রয়েছেন। তা ছাড়াও নির্বাচনকে ঘিরে আগামী বুধবার পর্যন্ত চার দিনব্যাপী প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিক সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভোটার ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ১৮২ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লক্ষ ২৮ হাজার ২৭৮ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এ ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক। ওই বছরের ৭ জুলাই তিনি মেয়রের দায়িত্ব নেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে মেয়রের পদ শূন্য হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে