Views Bangladesh Logo

‘ট্রমায় আক্রান্ত’ কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার

কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার নিজেই ট্রমায় আক্রান্ত, এমনটিই বলেন স্থানীয়রা। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই সরকারের আমলে দুবার ঘটা করে উদ্বোধন হলেও তা চালু হয়নি দীর্ঘ দেড় যুগেও। শুধু রাজনৈতিক প্রতিসিংসার কারণে জনগণের টাকায় নির্মিত একটি জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী। অথচ মহৎ উদ্দেশ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের পাশে কুমিল্লা দাউদকান্দিতে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় এই ট্রমা সেন্টার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা দিয়ে জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করা হয়। অথচ নির্মাণের পর কখনোই সেখানে চালু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম। এখন কোনোমতে নামমাত্র একটি বহিঃবিভাগ রয়েছে। যাতে শুধু স্থানীয় রোগীদের ন্যূনতম সেবা দেয়া হয়। তাও সাধারণ রোগের।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের দৈর্ঘ্য ১০৭ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে রয়েছে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক, কুমিল্লা নোয়াখালী মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়ক। এ তিনটি সড়কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের ঢাকা বা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিতে যে সময় লাগে তাতে পথেই অনেকের জীবনাবসান ঘটে। এই অবস্থায় আহতদের দ্রুত সময়ে চিকিৎসাসেবা দিতে এখানে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারটি স্থাপন করা হয়। গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে সে সময় ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর সরঞ্জামের অভাবে এক মাস পরেই এটি বন্ধ হয়ে যায়।

পরে আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ন ম রুহুল হক এটি দ্বিতীয় বারের মতো উদ্বোধন করেন। নামমাত্র উদ্বোধনের ফলে আউটডোর বাদে আর কোনো সেবা চালু হয়নি। মহাসড়কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটি নিজের ট্রমা অবস্থা থেকে কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের জন্য এ হাসপাতালটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ, রোগীর থাকার সকল ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তিনতলাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটি পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।

বিশেষায়িত এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন স্থানীয় সাত-আটজন রোগীর বেশি কেউ চিকিৎসা নিতে আসেন না। জরুরি বিভাগ এবং চিকিৎসক ও নার্সদের কক্ষেই চলছে বহির্বিভাগের চিকিৎসা। ভবনের দেয়ালগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে, দরজা জানালায় মরিচা ধরেছে। পরিচর্যার অভাবে হাসপাতালটি এখন ভূতুরে ঘরে পরিণত হয়েছে। নিচ তলার দুটি কক্ষ ছাড়া আর কোন কক্ষই খোলা হয় না দীর্ঘদিন।

স্থানীয় যুবক মেহেদী হাসান রনি, আবুল বাশার, আবদুল মালেক ও এলাকাবাসী জানায়, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান করা হলো অথচ তা থেকে মানুষের কোনো উপকার হলো না, এটা কোনো রাষ্ট্রের নিয়ম হতে পারে না। তারা বলেন, দ্রুত এ ট্রমা সেন্টারটি চালু করে মানুষের সেবায় কাজে লাগানো হোক। অবহেলায় এমন একটি জরুরি প্রতিষ্ঠান নষ্ট হতে পারে না। তারা বলেন, এটি চালু না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেকেই অকালেই প্রাণ হারাচ্ছেন।

ট্রমা সেন্টারের মেডিকেল অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, ভবনটির পরিচর্যা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো সুরক্ষিত আছে। এখানে চিকিৎসা দেয়ার সব সুবিধা আছে। এর অনেক মূল্যবান যন্ত্র গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। কিছু উন্নত সরঞ্জাম সরবরাহ এবং লোকবল প্রদান করা হলে এটি পুরোদমে চালু হবে। এতে দুর্ঘটনাকবলিত রোগীদের জীবন রক্ষা হবে।

কুমিল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন (ডেপুটি সিভিল সার্জন) রেজা মো. সারওয়ার আকবর বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতির্নিধারকরা সিদ্ধান্ত নিলে এটি দ্রুত চালু করা যায়। লোকবল এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলে তা চালু হবে। তবে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. অমিরুল কায়সার বলেন, দুর্ঘটানায় এখানকার মহাসড়কগুলোয় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এটি চালু হলে অনেকের প্রাণ বেঁচে যাবে। এটা যেন দ্রুত চালু করা হয় তার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ