Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পাহাড় কাটা মানে আমাদের ধ্বংস ডেকে আনা

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

দিন দিন বেড়েই চলেছে পাহাড়খেকোদের ক্ষুধা। পাহাড়খেকোদের ক্ষুধার শিকার হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংস হচ্ছে। চট্টগ্রামের ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্র ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা গেছে, ৪০ বছর আগেও চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০টি পাহাড় ছিল, যার ৬০ শতাংশ এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের ‘নাগিন পাহাড়’ নামে পরিচিত পাহাড়টিও পাহাড়খেকোদের কবলে পড়েছে। অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে দুই স্থানীয় নেতার নাম। অভিযোগ রয়েছে, প্রথমে পাহাড় কেটে সমতল করা হয়। পরে তা বিক্রি করা হয় প্লট আকারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কেন জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ গিয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের ধরছে না? এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, পাহাড় কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করে লাভ নেই। তাই গ্রেপ্তার যদি করতে হয় তবে মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

গত ৩১ মার্চ রাতে পাহাড়কাটা বন্ধ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ায় বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান নামের এক যুবক। এ নিয়ে ২ এপ্রিল ভিউজ বাংলাদেশের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল: পাহাড়খেকোদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। এসব বিষয়ে পত্রিকায় প্রায়ই লেখালেখি হয়; কিন্তু যথাবিহিত ব্যবস্থা নেয়া হয় বলা যাবে না।

পাহাড়খেকোদের হাত কতটা লম্বা যে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় না? এটা সবাই জানে যে এসব পাহাড়খেকোরা রাজনৈতিক ছত্রছায়াতেই বেড়ে ওঠে। বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব। তাও কেন এসব পরিবেশ বিপর্যয়কারীরা আইনের ফাঁক-ফোকর গলে রেহাই পেয়ে যায়?

শুধু যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দিয়েই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে তা না, এর জন্য দরকার গণসচেতনতা। পাহাড় ধ্বংস আখেরে সবারেই ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসবে। কতিপয় দুষ্কৃতকারীর সামান্য লাভের বিনিময়ে এ সামষ্টিক মানুষের বিরাট ক্ষতি। পাহাড় ধ্বংসকারীদের ‘জাতীয় শত্রু’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের এক সভা থেকে। আমরাও আশা করব, এই জাতীয় শত্রুদের দ্রুত আইনের আওয়তায় আনা হবে। এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়।

পাহাড় কাটাও যে জঙ্গলের গাছ কাটার মতো একটি পরিবেশ বিপর্যয় তা অনেকেই বুঝতে পারছে না। পাহাড় মাটির গাঁথুনি শক্তি মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার অর্থ মাটি ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি করা। এসব পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ধসের আশাঙ্কাও বাড়ছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, পাহাড় ভূপৃষ্ঠের ওপর পেড়েকের মতো কাজ করে। ভূকম্পন প্রতিরোধে পাহাড়গুলো রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তা ছাড়া পাহাড়ি বনাঞ্চলে অনেক জীবনবৈচিত্র্য রয়েছে। পাহাড় ধ্বংসের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের জীবনসহ সমস্ত জীববৈচিত্র্যেরেই ধ্বংস ডেকে আনছে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে পাহাড়গুলোও আমাদের রক্ষা করতে হবে। পাহাড় আমাদের জন্য পাকৃতিক আশীর্বাদ। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গাছ কাটা হলেও কৃত্রিম বনাঞ্চল তৈরি সম্ভব, যা এখন দেশে ব্যাপক হারে হচ্ছে; কিন্তু, পাহাড় ধ্বংস হলে কৃত্রিমভাবেও তা আর তৈরি করা সম্ভব নয়। একটি পাহাড় কাটার অর্থ হচ্ছে চিরতরে তার অস্তিত্ব পৃথিবীর মাটি থেকে বিলুপ্ত করে দেয়া, যার পরিণাম হবে ভয়াবহ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ