দুই বাসের মরণরেসে প্রাণ গেল চারজনের
অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকের প্রতিযোগিতায় মত্ত দুই বাসের ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে সাভারে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে একই পরিবারের চারজনের। আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের রাজফুলবাড়িয়ায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার ওই দুর্ঘটনায় দূরপাল্লার শ্যামলী পরিবহন ও ঝুমুর পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস দুটিসহ পাশ দিয়ে যাওয়া আরও একটি ট্রাকেও আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারটি যানবাহনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চারজনের মরদেহ ও আহত সাতজনকে উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো এবং চিকিৎসার জন্য আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতরা সবাই অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী। তারা বাইরে বের হতে না পেরে জীবন্ত পুড়ে মারা যান। আর আহতরা বাস দুটির যাত্রী। তবে সে দুটিসহ ট্রাকের অন্য যাত্রী ও চালকরা বের হতে পারায় বেঁচে যান তারা।
নিহতরা হলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভাবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন, তার ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিক, স্ত্রী সোনিয়া আক্তার ও স্ত্রীর বড় বোন মাহফুজা আক্তার শিলা। নিহত শিলা রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার কনস্টেবল শাহীনের স্ত্রী।
গোপালপুর উপজেলার লাল মিয়া সিদ্দিকের ছেলে ফারুক হোসেন তার অসুস্থ ছেলে ফুয়াদকে ডাক্তার দেখাতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় আসছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভোগা ১২ বছরের শিশুটির অসুস্থতা হঠাৎ বেড়ে গেলে মধ্যরাতেই পরিবার নিয়ে রওনা হন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী সাভারের ফুলবাড়িয়ার মোহাম্মদ মাশফিক বলেন, ‘আমি আর আমার মামা ঘটনাস্থলের খুব কাছেই ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হওয়ায় দৌড়ে যাই। জানতে পারি, ঢাকার দিকে যাওয়া শ্যামলী পরিবহনের বাসটি প্রথমে ঝুমুর পরিবহনের বাসটিকে ওভারটেক করে। তখন ঝুমুর আরও গতি বাড়িয়ে শ্যামলী পরিবহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দেয়। পরে পেছনে থাকা ১২০ মাইল গতিবেগের শ্যামলী বাস ঝুমুর বাসকে ধাক্কা দেয়। ঝুমুর বাসটি আবারও অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা যাত্রীরা বের হতে না পেরে পুড়েই মারা যান। বাস দুটিসহ পাশ দিয়ে যাওয়া আরও একটি ট্রাকে আগুন লেগে যায়।’
বাস দুটির অতিরিক্ত গতি থাকা ও ওভারটেকিং প্রতিযোগিতার ধারণা দিয়েছেন সাভার ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইনচার্জ মেহেরুলও। তিনি বলেন, মহাসড়কটির পুলিশ টাউনের সামনে ঢাকামুখী লেনে গাড়িগুলোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে কোনো বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণ ঘটলে গাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যেত না।
মেহেরুল বলেন, ‘একই দিকে যাচ্ছিল তিনটি গাড়ি। বাস দুটি সজোরে ধাক্কা দেয়ায় অ্যাম্বুলেন্সটির ফুয়েল লিকেজ হয়ে যায়। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারণা, ধাক্কা লাগায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা যাত্রীরা গুরুতর আহত হয়ে বের হওয়ার সুযোগ পাননি। গাড়িগুলো পর পর একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো অবস্থায় ছিল। আমরা অ্যাম্বুলেন্সের চালকের পাশের আসন থেকে একজন পুরুষ এবং পেছনের সিট থেকে একজন পুরুষ, একজন নারী ও একজন শিশুর মরদেহ পেয়েছি।’
সাভার হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মহাসড়কের ডিভাইডারে অ্যাম্বুলেন্সটি ধাক্কা দেয়। তখন পেছন থেকে একটি বাস অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দিলে দুটি গাড়িতেই আগুন লেগে যায়। পরে পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয়া আরও একটি গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রাকটিতে সামান্য লেগেছিল। আগুনে পোড়া গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার ড. আ ক ম আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ‘কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি। যাত্রী-চালকদের সঙ্গেও কথা বলবো। মহাসড়কের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত গতির বিষয়টি দেখা হবে। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারণা, অ্যাম্বুলেন্সটি ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে মহাসড়কে উঠলে পেছন থেকে বাসগুলো আঘাত করে। আবার, এমনও হতে পারে যে, বাসটি প্রথম আঘাতে ডিভাইডারে ধাক্কা খায়। এতে আগুন ধরে যায়।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে