দলীয় কোন্দলে নেতাকর্মীর মৃত্যু কাম্য নয়
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের পর আশা করা গিয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কিছুটা বোধোদয় হবে। নিজেদের মধ্যে তারা আর হানাহানি, রক্তপাত ঘটাবেন না। তারা একটি সুন্দর দেশ গড়ার দিকে মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি সেই আগের ধারাতেই বহমান। নিজেদের মধ্যে কোন্দলে তারা নিহত হচ্ছেন, আহত হচ্ছেন। কর্মীদের মধ্যে রেষারেষি, নেতাদের মধ্যে বিরোধ, মূল সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গসংগঠনের মতভিন্নতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত আট মাসে সংর্ঘষে ৫১ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন চার শতাধিক নেতাকর্মী-সমর্থক।
আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৪৮টি সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অনেক ঘটনায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। বিএনপি বহিষ্কার করেছে ৪৭ নেতাকে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০২ জন। তাদের হিসাবে মার্চে সারাদেশে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর ৮৮টিই বিএনপির অন্তর্কোন্দলে।
প্রশ্ন হচ্ছে, নিজেদের মধ্যেই কেন ঘটছে এত কোন্দল? অন্তর্কোন্দলে কেন ঘটছে নেতাকর্মীদের আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা? তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই ঘটছে এসব কোন্দল। আমাদের দেশে কথার কথার মতোই বলা হয় রাজনৈতিক-সংস্কৃতির কথা। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই কোনো গণতান্ত্রিকচর্চা নেই। তারা যেভাবেই হোক জোরজোবরদস্তি করে কেবল আধিপত্যই বিস্তার করতে চায়। ভাগবাটোয়ারাতেই যেন তারা বেশি তৎপর ও আগ্রহী।
আওয়ামী লীগের এখন রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। এই সুযোগে অন্যান্য দলগুলো নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে। কে কার আগে কী খাবে তাই নিয়ে তাদের ঘুম হারাম। এটাই চলেছে আমাদের দেশে গত ৫৩ বছর ধরে। এক দল ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হলে আরেক দল এসে ক্ষমতা অপব্যবহার করে লুটপাটে ভাগ বসিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে কেবল দখলের রাজনীতিই চলেছে। রাজনৈতিক জোরে কেড়ে খাওয়ার পেছনে ছুটেছে সব রাজনৈতিক দল। যার কারণে দেশের অনেক সাধারণ মানুষের রাজনীতির ওপরও আর তেমন আস্থা নেই। তার মানে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রবণতা সাধারণ জনগণ ও রাজনীতিবিদ উভয়পক্ষ থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন পেয়েছে। কিন্তু এটা তো দেশের জন্য ভালো কথা না। এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। যার পরিণতি বিগত সময়গুলোতে দেখা গেছে। এবং তার ফল সবাইকেই কমবেশি ভোগ করতে হয়েছে।
দেশ এখন যেমন একটা সংস্কার-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি নানা সংকটের মধ্য দিয়েও যাচ্ছে। এই সময়ে যদি দলীয় কোন্দল থামানো না যায় তার ফল শোভন হবে না। এই দলীয় কোন্দল থামানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। তা নাহলে জনগণের কাছে একদিন তাদের অবশ্যই জবাবদিহি দিতে হবে। বিগত সময়ের আলোকে তারা যেন তা মনে রাখেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে