Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ই-কমার্সের প্রতারিত গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পাচ্ছেন

Special  Correspondent

বিশেষ প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া উদ্যোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতারিত গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তারা ফেরত পেয়েছেন ৪১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের বৈঠকে গ্রাহক প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং পেমেন্ট গেটওয়ে প্রধানদের ডেকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল ও অনুবিভাগের প্রধান মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে এ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ অর্থ প্রতারিত গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিয়েছে তার তালিকা উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠান ৬৭ হাজার ৩৮২টি অর্ডারের বিপরীতে ৪১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে। এর মধ্যে কিউকম লিমিটেড ৩৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকা, আলেশা মার্ট ৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, দালাল প্লাস ১৯ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং ই-ভ্যালি ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।

বৈঠকে ই-ভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, ই-ভ্যালি ব্যবসা করার মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা সব অর্থই পর্যায়ক্রমে ফেরত দেবে।

কিউকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিপন মিয়া বৈঠকে জানান, কিউকম লিমিটেডের পক্ষ থেকে এসক্রো সিস্টেমে আটকে থাকা সব টাকাই গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। ফস্টার কর্পোরেশন লিমিটেডের কাছে আটকে থাকা অর্থ কিউকম লিমিটেডের প্রাপ্য। অথচ কিউকম লিমিটেডকে তা পরিশোধ করা হচ্ছে না। এর জবাবে বৈঠকে উপস্থিত ফস্টার কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাহাদুর খান জানান, তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শুধুমাত্র কিউকম লিমিটেড লেনদেন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকা আটকে থাকলেও পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার পর তা ৪২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তিনি কিউকম লিমিটেডের সঙ্গে লেনদেনের আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জানান, কিউকম লিমিটেডের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে ফস্টার কর্পোরেশন থেকে গ্রাহকের অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বৈঠকে দালাল প্লাসের পয়েন্ট অব কনট্যাক্ট হাসনাইন খুরশেদ জানান, দালাল প্লাসের মালিকপক্ষ জেলে থাকায় সার্ভার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় গ্রাহক তালিকাও করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সূর্যপে পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হলে তা যাচাই-বাছাই করে গ্রাহক তালিকা করা সম্ভব হবে। এ সময় সূর্যপে পেমেন্ট গেটওয়ের ব্যবস্থাপক তৌহিদুর রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠানের গেটওয়েতে দালাল প্লাসের যে পরিমাণ অর্থ আটকে আছে তার লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য দ্রুত সরবরাহ করা হবে।

ই-অরেঞ্জের আইজনীবী বৈঠকে জানান, ই-অরেঞ্জের মালিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আগের মালিকানায় থাকা সোনিয়া মাহজাবীন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে মানি লন্ডারিং মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দিয়ে মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হলে গ্রাহকদের আটকে থাকা অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।

আলেশা মার্টের আইনজীবীও জানান, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কারাগারে আছেন। ফলে তিনি সরাসরি কিছু স্বাক্ষর করতে পারছেন না। তবে তিনি পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল কমার্সের কাছে আটকে থাকা দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকা ফেরত দিতে তালিকা দাখিল করতে চান।

সভায় উপস্থাপিত তথ্যে আরও জানানো হয়, আলদিনের প্রদীপ তাদের জব্দকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকদের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দিতে আগ্রহী। তবে সিরাজগঞ্জ শপ গ্রাহকের অর্থ ফেরতের বিষয়ে এর আগে আগ্রহ দেখালেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রত্যেক ই-কমার্স এবং পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ব স্ব ক্ষেত্রে যে ধরনের জটিলতা রয়েছে তা নিরসনে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়ে দ্রুত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়।

বৈঠকে আরও জানানো হয় যে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে বিভিন্ন ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসংখ্যা অভিযোগ জমা রয়েছে। জনবলের অভাবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতায় এসব অভিযোগের নিস্পত্তি করা যাচ্ছে না। এর প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আটকে থাকা গ্রাহক অভিযোগ নিস্পত্তির জন্য সফটওয়্যার উৎপাদক ও আমদানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বেসিককে ২০ জন এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবকে ১০ জন জনবল দিয়ে অভিযোগ নিস্পত্তিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে বলা হয়।

যেসব গ্রাহক অর্থ পরিশোধ করেও বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য পাননি, তাদেরকে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার পরিষদে অভিযোগের পরামর্শ এবং যেসব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের অর্থ পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ব্যাংক হিসাবে আটকে রয়েছে তার তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ