Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে গভীর শঙ্কা

M A  Khaleque

এম এ খালেক

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফআইসিসিআই) বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বিনিয়োগ (স্থানীয় ও বিদেশি) একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। তাই বিনিয়োগ আহরণ এবং ধরে রাখার জন্য নীতির ধারাবাহিকতা থাকা খুবই প্রয়োজন। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজির নিরাপত্তার স্বার্থে নীতির ধারাবাহিকতা কামনা করে। কারণ কোনো দেশ বা অঞ্চলের বিনিয়োগ করা হলে চাইলেই তা প্রত্যাহার করে নেয়া যায় না; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গৃহীত নীতিগুলো মাঝে মাঝেই পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। বেসরকারি মালিকানাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। এতে পাইপলাইনে থাকা বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, এখন থেকে বেসরকারি মালিকানাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো কর অব্যাহতি সুবিধা থাকবে না। আবার সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন কোম্পানি গঠন ব্যতীত কোনো কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যাবে না। তার অর্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে কোনো কোম্পানির কার্যক্রম থাকলে এবং নতুন করে তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে চাইলে তারা কর অবকাশ সুবিধা পাবেন না। সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শর্ত সাপেক্ষে কর অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকলেও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে থেকে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা করা হচ্ছে। সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেসব প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে শুধু তারাই কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে। এতদিন বিদেশি কোম্পানিগুলোর অর্জিত মুনাফা, বিদেশি কর্মী নিয়োগ,রয়্যালিটি প্রদানের ওপর যে কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যেত, তা বাতিল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একাধিক কোম্পানির অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় ধরনের বিনিয়োগ পাইপ লাইনে আছে। তারা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এখন তাদের প্রদত্ত কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে এসব বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কর অব্যাহতির কারণেই মূলত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলনে যেসব দাবি তুলে ধরেছেন তা নানা কারণেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দাবিগুলো পর্যালোচনার দাবি রাখে। যে কোনো দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ইস্যুটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রোডাক্টিভ সেক্টরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ ছাড়া কোনো বিনিয়োগ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে না। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। আর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কৃষি বা অন্য খাতে শিল্প খাতের মতো

কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই উন্নত দেশগুলো সুষম শিল্পায়নের ওপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই এবং কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীতে এমন একটি দেশও দেখানো যাবে না, যারা শিল্পকে অবহেলা করে শুধু কৃষি খাতের ওপর জোর দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পেরেছে। এমনকি যেসব দেশ কৃষি খাতের ওপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের চেষ্টা করেছে তারাও কৃষি শিল্পায়ন করেছে। অর্থাৎ শিল্পের উপকরণ বা কাঁচামাল গ্রহণ করেছে কৃষি খাত থেকে। কৃষিজাত পণ্যকে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার না করে অপ্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে কোনো দেশই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারেনি। অর্থাৎ একটি দেশ কৃষিতে যতই উন্নত হোক না কেন, তারপরও তাকে সেই কৃষিজাত পণ্য শিল্পের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার বা রপ্তানি করতে হয়েছে। শিল্পে সহায়তা ব্যতীত কৃষি এককভাবে কখনোই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাত্রায় অবদান রাখতে পারে না।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই শিল্পায়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা এখনো সঠিক জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারিনি। সময়ে সময়ে নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে আমাদের শিল্প খাতে এখনো সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা কি বৃহৎ শিল্প স্থাপনের প্রতি বেশি জোর দেবো নাকি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প আমাদের জন্য বেশি উপযোগী এই সিদ্ধান্তে আমরা এখনো পৌঁছুতে পারিনি। কীভাবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত উপকরণ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।

বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশ কিছু ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এটা খুবই ভালো একটি কার্যক্রম; কিন্তু আমরা এই কার্যক্রম কিভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং এর সুফল কীভাবে জাতি পেতে পারে সে ব্যাপারে কি আমরা কোনো চিন্তা-ভাবনা করছি? প্রথমেই আসবে শ্রমিকের প্রসঙ্গটি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের উদ্বৃত্ত পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আসবেন। তারা কিন্তু সঙ্গে করে শ্রমিক নিয়ে আসবেন না। বিদেশি কারখানায় শ্রমিকের জোগান স্থানীয়ভাবেই দিতে হবে; কিন্তু বাংলাদেশে যে শ্রম শক্তি আছেন তারা কি বিদেশি কারখানার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম? আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেই বাংলাদেশে সস্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিকের নিশ্চিত জোগানের কথা বলে থাকি। আমরা কি একবারও ভেবে দেখি, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি এত কম কেনো? বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকাংশই অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ। তাদের উৎপাদনশীলতাও কম। এমন শ্রমিকের মজুরি তো কম হবেই। পরিকল্পনাকারীরা বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে; কিন্তু বিদেশি উদ্যোক্তারা কি অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে তাদের কারখানার উৎপাদনশীলতা নষ্ট করতে চাইবেন?

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন শীতের অতিথি পাখির মতো। শীতের অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করে না বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তেমন কোনো দেশে তাদের পুঁজি ও জীবনের নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত মুনাফার সম্ভাবনা না দেখলে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হন না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তারা চাইলেও যে কোনো দেশে বিনিয়োগের জন্য যেতে পারেন। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ এবং ধরে রাখতে হলে উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মুখে যতই বলি বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান; কিন্তু আসলে বিনিয়োগের পরিবেশ মোটেও অনুকূল নয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। কয়েক বছর আগে জাতিসঙ্ঘের এক সহযোগী সংস্থার উদ্যোগে প্রকাশিত ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো ১৭৬তম। অর্থাৎ বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশের দিক থেকে ১৭৫টি দেশ বাংলাদেশের ওপরে ছিল। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতি এবং অনাচার বিদ্যমান। কোনোভাবেই বিনিয়োগ পরিবেশ অনুকূল করা যাচ্ছে না।

বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতায় বাংলাদেশ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করতে পারছে না। দেশে সরকারি খাতে বিনিয়োগ যেভাবে বাড়ছে ব্যক্তি খাতে ঠিক সেভাবে বিনিয়োগ বাড়ছে না। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হলে তা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানে সহায়ক হয়। আর সরকারি খাতে বিনিয়োগ হয় মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য। সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের তেমন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় না। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার তাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৪০ শতাংশের ওপরে হওয়া প্রয়োজন; কিন্তু অনেক দিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৩/২৪ শতাংশে ওঠানামা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অনুপাত ছিল ২৪ দশমিক ৯৪।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অনুপাত ছিল ২৫ দশমিক ২৫। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অনুপাত ছিল ২৪ দশমিক ০২। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটা ছিল ২৩ দশমিক ৭০। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের অনুপাত ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৫২। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটা ছিল ২৩ দশমিক ৬৪। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রেও এক ধরনের বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ১১৪ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করেছিল। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০২ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হয়েছিল ৭১ কোটি মার্কিন ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ যেটুকু আসছে তাও পুরোটা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনেক সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগের জন্য আসে কিন্তু পরবর্তীতে নানাভাবে নাজেহাল হয়ে বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে চলে যান। অনেক বছর আগে বিনিয়োগ বোর্ডের উদ্যোগে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর এক জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়েছিল।

সেখানে দেখা গিয়েছিল, প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয় তার মধ্যে ৩৯ শতাংশ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়। এবং ৬১ শতাংশ প্রস্তাবের কোনো খবর পাওয়া যায় না। এখন অবস্থায় উন্নতি হয়েছে; কিন্তু কতটা উন্নতি হয়েছে? প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী তার নিজ দেশে রেখে বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগের জন্য আসবেন? বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ১৭ কোটি মানুষের এক বিরাট মার্কেট। বাংলাদেশ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের ভোগ এবং ব্যয়ের সামর্থ্য দ্রুত বাড়ছে। তিন দশক আগে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারের হার ছিল ১২ শতাংশ, এখন তা ২০ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। শহরের সুবিধাদি এখন গ্রাম পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সুবিধা এখন গ্রামে বসেই পাওয়া যায়। কিছু দিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে ফ্রিজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। পৃথিবীতে এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখান ৩-৪টি দেশ মিলেও ১৭ কোটি লোক বাস করে না। তাই বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।

বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় এই কারণে যে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। আরও অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ শুল্ক ছাড় পেয়ে থাকে। মালয়েশিয়ার একজন বিনিয়োগকারী যদি তার নিজ দেশে শিল্প স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে রপ্তানি করেন তাহলে তাকে ন্যূনতম ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে; কিন্তু সেই একই ব্যক্তি যদি বাংলাদেশ শিল্প স্থাপন করে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে রপ্তানি করেন তাহলে তাকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না; কিন্তু এখানেও দুঃসংবাদ আছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উন্নীত হবার পর বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া জিএসপি সুবিধা হারাবে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে হলে তাকে ন্যূনতম ১২ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আর আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য থাকবে না। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কলুষিত হয়েছে তাতে আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে নিশ্চিতভাবেই।

এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ