ডেঙ্গু প্রতিকারে টিকার দিকে না তাকিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি দেশের শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ, ডেঙ্গুর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা কী হওয়া উচিত এবং এই সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ মুহূর্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেসব বিষয়ে ‘ভিউজ বাংলাদেশ’-এর মুখোমুখি হয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কে এম জাহিদ।
ভিউজ বাংলাদেশ: গত কয়েক মাসে ১৮ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যার দুই-তৃতীয়াংশই ঢাকার বাইরের রোগী। আর মৃত্যু ১০০ জনেরও বেশি। তাহলে ডেঙ্গু বিস্তার কেন ঢাকার বাইরে বেশি হলো?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: আমাদের দেশে ডেঙ্গু আসলে নতুন রোগ না, পুরোনো রোগ। সেই ২০০০ সাল থেকেই আমরা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি; কিন্তু গত কয়েক বছরে এর প্রকোপ বা ব্যাপকতা বাড়ছে। ২০২৩ সালে প্রায় তিন লাখের ওপরে আক্রান্ত ছিল, মারা গেছে ১৭০৫ জন; কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে, এটা জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এক সময় আমরা মনে করতাম, ডেঙ্গু মৌসুমি রোগ। এ রোগ শুধু বৃষ্টি-বাদল বাড়লেই বা বর্ষার সময়ই হয় কিন্তু সে ধারণা ভুল। এখন এটা শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই হচ্ছে কম আর বেশি। এ বছর শুরুতে তেমন ছিল না; কিন্তু ঠিক এই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে এর মাত্রা অনেক বেশি। আক্রান্তও অনেক বেশি। হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বিভিন্ন জেলা শহর ও মফস্বলের রোগীই বেশি। এর আগে আমরা মনে করতাম এটি শুধু শহরের রোগ; কিন্তু গত দুই-তিন বছরে দেখা যাচ্ছে গ্রামেও এ রোগের বিস্তার অনেক বেশি। কারণ এখন গ্রামেও পানি জমে থাকছে, গুঁড়িগুঁড়ি পানি হলে জমে থাকছে আর ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও উপদ্রব বাড়ছে। গ্রামের মানুষ মশারি তেমন ব্যবহার করে না বা ডেঙ্গু নিয়ে তেমন সচেতনও না। সে কারণেও বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা গ্রামে ও মফস্বলে। আর একটি কারণ হলো ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের কারণে রেল বাস-ট্রাক ও বিভিন্ন প্রকার মোটর গাড়িতে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম-গঞ্জ-শহরে। আর তাতেই বিস্তার লাভ করছে এই রোগ। আর আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
ভিউজ বাংলাদেশ: এবার কি নতুন ভেরিয়েন্টের ডেঙ্গু দেখা যাচ্ছে? ডেঙ্গুর ৪টি ধরনের কোনটি বেশি মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশাকেই আমরা এডিস মশা বলি। জলবায়ু পরিবর্তনের হার যত বেশি হবে, শহর বা এলাকা যত নোংরা বা জলাবদ্ধ হবে, ততই এই এডিস মশার সংখ্যা বেড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও যাবে বেড়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে চারটি ডেঙ্গু ভাইরাসের টাইপ বা ধরন দেখা গেছে। ডেন-১, ২, ৩ ও ৪-এর মতো চারটি সিরোটাইপ। এগুলো কিন্তু একই রকম। তবে মাত্রা বা অ্যাকশনের ওপর এর ধরন আছে। আসলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বা মৃত্যুঝুঁকি শুধু এর ধরনের ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে কে কতবার আক্রান্ত হয়েছে, কী কী টাইপ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবার ওপরও নির্ভর করে। কেউ যদি প্রথমবার ডেন-১ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে সেটা তেমন সিরিয়াস না। নরমাল সর্দি-কাশি-জ্বর ও মাথাব্যাথার মতো নরমাল কিছু হয়ে ভালো হয়ে যাবে। আবার কেউ যদি সেকেন্ড টাইম, থার্ড টাইম বা ফোর্থ টাইম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; তাহলে তার সিভিয়ারিটি অনেক বেশি হতে পারে এবং সেটাই হচ্ছে এখন। তাই এখন কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত সিভিয়ার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। কারণ সে হয়তো আগেই ডেন-১ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তা সে বুঝেই নাই। এখন সে যখন আক্রান্ত হচ্ছে, সে আসলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা কেউ কেউ চতুর্থবারের মতো আক্রান্ত হচ্ছে। যে কারণে হঠাৎ করেই সে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, এমনকি খুব কম সময়ের মধ্যেই রোগীর মৃত্যুও হচ্ছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: কোন বয়সীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ও কেন? মৃত্যুইবা কাদের বেশি?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: আক্রান্তের ক্ষেত্রে বয়সের ভেরিয়েশন নাই। যে কোনো বয়সের যে কোনো মানুষই এখন আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের হার বেশি। আবার বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে, এ বছর পুরুষদের আক্রান্তের হার ও মৃত্যু হার বেশি দেখা যাচ্ছে; কিন্তু যাদের কোমরবিটি আছে, বাচ্চা ও বয়স্ক যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ও মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে, কিডনি রোগী, ক্যান্সারের রোগী, হার্টের রোগী, স্টোকের রোগী- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম; তারা আক্রান্ত হলে মারাত্মক হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। এবং গর্ভবতী মহিলারা আক্রান্ত হলে তাদেরও মারাত্মকতা ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
ভিউজ বাংলাদেশ: এ ক্ষেত্রে সচেতনতা ও চিকিৎসা কী?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: সচেতনতার ক্ষেত্রে জনগণকেই প্রথম সচেতন হতে হবে। যেহেতু এটা ভাইরাসজনিত রোগ, সেহেতু ভাইরাসজনিত অন্যান্য রোগের মতো এরও লক্ষণ প্রকাশ পায় জ্বরের মাধ্যমে। পাশাপাশি সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথার পাশাপাশি সব শরীরও ব্যথা হতে পারে। তবে জ্বরের মাত্রা হয় তীব্র। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে বমি ও ডায়েরিয়াও হতে পারে। যদিও বর্তমানে ডেঙ্গুর ট্রিপিক্যাল লক্ষণগুলো এখন আর তেমন প্রকাশ পাচ্ছে না। যেহেতু দেশে এখন ডেঙ্গু আছে সেহেতু এসব লক্ষণ দেখা দিক বা না দিক জ্বর হলেই ৩ দিনের মধ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ মতো এনএস-ওয়ান এন্টিজেন সিম্পল ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে নিবেন। আর যদি টেস্টে পজিটিভ আসে, তাহলে দ্রুত সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা শুরু করবেন। তাহলে এই যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, সেটা আর হবে না। কারণ হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী শকে গেলে তা আর ভালো করা যায় না। তাই এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা অতিব জরুরি। আর জনগণের জন্য আরেকটি খবুই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো; যে কোনো জ্বরে প্যারাসিটামলের বাইরে কোনো ওষুধ খাবেন না। যদি জ্বর বা রোগ ৩ দিনের বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ খাবেন। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বেড়ে গেলে তখন ডাক্তার-বদলি করে; বড়বড় হাসপাতালে ভর্তি হয়েও আর কোনো উপায় থাকে না। আর একটি বড় বিষয় হলো ডেঙ্গু হলে বেশি বেশি পানি, স্যালাইন, চিড়ার পানি, ডাবের পানির মতো অবশ্যই সব তরল খাবার খেতে হবে। অন্য খাবার খেলেও বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। সঙ্গে লেবু, বাতাবি লেবু, মাল্টা, কমলার মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের পাশাপাশি অন্যান্য সব ধরনের ফল খেতে পারেন। তবে কেউ কেউ শুধু ডাবের পানিই খাওয়ান, তা ঠিক না। ডাবের পানিতে শুধু এক রকম চাহিদা পূরণ হয় অন্যান্য ভিটামিন মিনারেল ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না। তাতে শরীরের অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে রোগী ও রোগের আরও অবনতি হয়ে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বেশি বেশি ডাব খাওয়াতে গিয়ে বাজারে ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েন না। এই চিকিৎসাগুলো রোগী বাড়ি থেকেই করতে পারে। আর যদি রোগী এসব খাবার খেতে পারছে না, বমি হয়ে উঠে যাচ্ছে, ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে বের হয় যাচ্ছে, তাতে কিন্তু রোগীর আবস্থা খারাপের দিকে যায়। এই পরিস্থিতি দেখা দিলে রোগীকে দ্রুততম সময়ে হাসপাতলে বা ক্লিনিকে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তি করিয়েই ডাক্তার তাদের ভেইনে বা শিরায় ফ্লইড স্যালাইন দিবে। তাই আমার পরামর্শ, যারা মুখে খেতে পারছেন, তারা ঘরে বসেই শুধু প্যারাসিটামল আর তরল খাবারের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নেন। তাতেই আপনি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই রোগমুক্ত হয়ে সুস্থ ও ভালো থাকবেন।
তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশু ও বয়স্কদের এবং যাদের ডায়বেটিস, ক্যান্সার, হার্টের-স্টোক ও কিডনি রোগ আছে, তাদের যদি ডেঙ্গু হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের ডাক্তারের পরামর্শে নিকটস্থ হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া ভালো। এমনকি গর্ভবতী মহিলারাও যেন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। না হলে মাসহ অনাগত সন্তানের যে কোনো ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই তাদের দিকেও খুব খেয়াল রাখতে হবে। যেন চিকিৎসার কোনো রকম ত্রুটি না হয়। অবহেলা না হয়। এ ছাড়া যারা বমি করছে কিছু খেতে পারছে না, পাতলা পায়খানা বা ডায়েরিয়া হচ্ছে তারাসহ যাদের পালস কমে গেছে, ব্লাডপ্রেশার কম তাদেরকেও হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এই জাতীয় রোগীরা কেউ যেন ঢিলেঢালা না করেন, সময় নষ্ট বা কালক্ষেপণ না করেন। তাতে কিন্তু জটিলতা বেড়ে রোগীর সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
ভিউজ বাংলাদেশ: এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য বা প্রতিরোধের জন্য টিকা আছে কি না? আমাদের দেশে টিকা উৎপাদন ও প্রয়োগ কোন পর্যায়ে আছে?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: ডেঙ্গুর টিকা ফ্রান্স ও জাপানের মতো দুই-একটি দেশে হচ্ছে। তবে গণটিকা যা ডব্লিউএইচও বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দ্বারা অনুমোদিত; তা কিন্তু এখন পর্যন্ত হয়নি বা বাজারে আসেনি। করোনার মতো সারা বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপকতা এত বৃদ্ধি পায়নি যে, গণহারে এ টিকা দিতে হবে। সে পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। এখন একটা আছে, তা হলো কিউ ডেঙ্গা টিকা। সেটাও সবার জন্য না, বয়সের মাপকাঠি আছে। আরেকটা আছে ডেন ভ্যাক্সি এটাও কিন্তু সবার জন্য না। আবার ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া ও ব্যাংককের মতো পৃথিবীর বেশ কয়েকটা দেশে কিছু টিকা এখনো ট্রায়াল পর্যায়ে আছে, সেগুলো এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। আর যদি অনুমোদন না পায়, তাহলে তো সে টিকা গণহারে দেয়াও যাবে না। এমনকি এই টিকা ঢালাওভাবে দেয়ার এখনো সময় হয়নি। সে জন্য আমাদের উচিত টিকার দিকে না তাকিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিকেই নজর দিতে হবে। সেটা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ের তেমনি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: দেশের প্রত্যেক সিটি করপোরেশনের মেয়র বরখাস্ত আর অধিকাংশ সিটি কাউন্সিলরা গা-ঢাকা দিয়েছে বা পলাতক। তাতে মশা মারার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণেও কি ডেঙ্গু বাড়ছে? ডেঙ্গু কেন কমছে না? দায়ী কোন প্রতিষ্ঠান?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: বর্তমানে একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাহলো প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মশা নিধনের কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধি মেয়ররা বরখাস্ত আর কাউন্সিলরা কেউ কেউ পলাতক আবার কেউ কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না বা কেউ কেউ রিজাইন করেছেন। সে কারণে মশক নিধনের কার্যক্রম কোথাও বন্ধ আবার কোথাও স্থবির হয়ে গেছে। মাঠেও কোনো বিষ প্রয়োগকারী কর্মী বা ফগার মেশিন হাতে কোনো কর্মীকে মশা মারতে দেখা যাচ্ছে না। এটা শুধু ঢাকায় না, সব সিটি করপোরেশনেরই একই দৃশ্য, একই স্থবিরতা। ফলে ডেঙ্গুর এই পিক টাইমে এখন যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে সামনের দিনে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হবে। তাই এই সরকারকে দ্রুত সময়ে যে কোনো উপায়ে এই শূন্যতা দূর করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালু করতে হবে। তাহলেই আক্রান্তের হার কমার পাশাপাশি মৃত্যুহারও কমবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: প্রতি বছর ডেঙ্গু মৌসুমে ওষুধ, ইনজেকশন স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে সিন্ডিকেট হয়। কি করণীয়?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: ডাক্তাররা চিকিৎসা দিবে। রোগীকে সেবা দিবে পরামর্শ দিবে; কিন্তু রোগী যদি দিন দিন বাড়তেই থাকে তাহলে ডাক্তারদের আর কিছু করার থাকে না। রোগীর চাপে সঠিক চিকিৎসাসেবা ওষুধ পথ্য এমনকি সিট পর্যন্ত দিতে পারে না। এই সব স্বল্পতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে, রোগীরা অনেক সময় সব সুযোগ সুবিধা পায় না বা পাওয়ার স্বল্পতা দেখা দেয়। তখনই দেখা দেয় নানা অসঙ্গতি। আর সেই সব অসঙ্গতি ও স্বল্পতাকে পুঁজি করেই হয়তো কেউ কেউ কিছু করে। যাকে আপনারা বলেন, সিন্ডিকেট। আসলে সিন্ডিকেট টিন্ডিকেট কিছু না। বাজারে ও হাসপাতালে স্যালাইন ও ওষুধ-পথ্যের সাপ্লাইচেইন ঠিক না থাকলেই এসব সমস্যা নিয়ে নানামুখী অভিযোগ ও কথা চাউর হয়। আসলে জনসংখ্যার ঘনত্বের এই দেশে এরকম অভিযোগ হরহামেশাই হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসকদের নিয়ে তো জনমনে অভিযোগের শেষ নেই। তাই সরকারকেই কঠোরহস্তে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবং জনগণ ও রোগীর উপকার হয় এমন সিদ্ধান্ত কঠোরহস্তে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সরকারকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিকিৎসা ও সচেতনা তৈরির বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে; কিন্তু সর্বক্ষেত্রের মানুষেরই নানামুখী অভিযোগ চিকিৎসা সেবা নিয়ে? অন্তবর্তীকালীন সরকারও চাচ্ছে সংস্কার করতে। স্বাস্থ্য বিভাগে কি সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন আপনি?
এ বি এম আব্দুল্লাহ: আসল কথা হলো, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি বছরের পর ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে আসেছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক পদ পাওয়ার জন্য দুর্নীতি ও ডাক্তারদের নানা রকম অবহেলার অভিযোগ ও সমন্বয়হীনতা আছে। অন্যান্য খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতেরও সংস্কার যদি এই সরকার করতে চায় তাহলে তো স্বাগতম জানাই। কতশ অভিযোগ আছে সাধারণ মানুষের। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ লেভেলে সংস্কার অতীব জরুরি। তবে ডাক্তার বা চিকিৎসার যে পরিমাণ সংস্কার করা দরকার তার চেয়ে বেশি দরকার স্বাস্থ্য খাতের প্রশাসনিক প্রর্যায়ে। শহরের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেয়াই হবে এ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ ও বড় সংস্কার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে