Views Bangladesh Logo

আমানত বাড়ছে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টে

Rasel Mahmud

রাসেল মাহমুদ

০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে বেড়েছে কোটিপতি আমানতকারী। একই সঙ্গে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টে (এনএফএ) বেড়েছে আমানতের স্থিতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বর শেষে এ ধরনের ব্যাংক হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এনএফএ হিসাবে আমানত বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। শুধু যে আমানত বেড়েছে, তা নয়; ডিসেম্বর শেষে বেড়েছে এ ধরনের হিসাবের সংখ্যাও। গত তিন মাসে এনএফএ হিসাব বেড়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি।


প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ২০১০ সাল থেকে সরকার ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেয়। যা নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট বা এনএফএ নামে পরিচিত। এসব অ্যাকাউন্টের সুবিধা হলো এখানে ন্যূনতম ব্যালান্স রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। সার্ভিস চার্জ বা ফিও দিতে হয় না।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আর্থিকসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। গত কয়েক মাস আগেও দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তবে এরপরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। আর এতেই দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষও ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ঠিক করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত ফিরতে শুরু করেছে।


জানা গেছে, ২০১০ সালে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের আর্থিকসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কৃষক ছাড়াও এসব হিসাবের আওতায় রয়েছেন পোশাক শ্রমিক, অতি দরিদ্র মানুষ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীসহ অনেকে। এর মধ্যে কৃষকদের হিসাব ও আমানত সবচেয়ে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এনএফএ ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে এসব হিসাবে আমানত বেড়েছে ৪০৩ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে নো ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৮টি। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টি। সে হিসাবে তিন মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠনের পর ব্যাংক খাত নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তখন ব্যাংক শতভাগ ‘সিকিউরড’ খাত হবে কি না, এমন দ্বিধায় অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছিলেন। সে সময় এসব হিসাব থেকেও আমানত তুলে নেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এ খাত নিয়ে আবার আস্থা তৈরি হয়।

এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। স্কুল ব্যাংকিং এনএফএ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হলেও ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা কেবল ১০০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। তবে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা ১০ টাকা জমা দিয়েই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি; যা মোট এনএফএ অ্যাকাউন্টের ৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে কৃষকের অ্যাকাউন্ট। তাদের আছে মোট অ্যাকাউন্টের ৩৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অতি দরিদ্রদের নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ