খাদ্য নিরাপত্তাহীতা রোধে চাই বৈষম্যহীন সমাজ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর প্রকাশিত খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩ নামের এ প্রতিবেদনটি চমকে যাওয়ার মতো- বাংলাদেশের ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ পরিবার ভুগছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। প্রতিবেদনটি বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে ৩ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ গত বছর চরম খাদ্য-সংকটে ছিল। এদের মধ্যে অনেকে সারা দিনে খেয়েছে একবেলা। অনেকে মাসে একবার, দুবার হলেও না খেয়ে ছিল। আর খেলেও তাদের খাবারের পুষ্টিমান ঠিক ছিল না। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। পুষ্টিহীনতার কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছে নানারকম অসুস্থতায়। কর্মদক্ষতা কমে যচ্ছে ব্যাপক হারে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জাতীয় অগ্রাধিকারভিত্তিক নীতি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যানভিত্তিক উপাত্ত প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। মাঠ পর্যায়ে মোট ২৯ হাজার ৭৬০ খানা থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপের তথ্যমতে, শহরের তুলনায় গ্রামে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বেশি। গ্রামে এ হার ২৪ দশমিক ১২ ও শহরে ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় এ হার মাত্র ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ঘরের কাঠামো বিবেচনায় কাঁচা ঘরে বসবাস করা ২৬ শতাংশ পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সেমিপাকা ঘরের ২০ শতাংশ ও পাকা ঘরের ১৫ শতাংশ পরিবার এমন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে খাদ্যনিরাপত্তীনতার হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে। রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সিলেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীন। ময়মনসিংহে ২৬ ও রাজশাহীতে এ হার ২৫ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে এ হার মাত্র ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, উৎপাদনকারীরাই সবচেয়ে বেশি ভুগছে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায়। যারা খাদ্য উৎপাদন করছে তারাই যদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। তাহলে প্রশ্ন উৎপাদনকারীদের খাদ্য আসলে যাচ্ছে কাদের পেটে? কেন উৎপাদনকারীরা নিজেরাই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে?
দেশে খাদ্য নিরাত্তাহীনতা সম্পর্কে অনেকে অনেররকম অভিমত দেবেন। কেউ বলবেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কেউ বলবেন বিশ্বমন্দা। তবে, বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের মূল কারণ সীমাহীন আয়বৈষম্য। বৈষম্য কমানো ছাড়া অসংখ্য মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কটানো সম্ভব নয়। আর সে ক্ষেত্রে সরকারসহ দেশের সামর্থবান সব মানুষকেই সচেতন হতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে