পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও বেসরকারি মেডিকেলেই প্রথমে হাত দিতে হবে
সুন্নতে খতনার জন্য হাসপাতালে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে শিশু আয়ান। তার বাবা-মায়ের অনুভূতি আমাদের কারও পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ান নামে ওই শিশুকে রাজধানীর সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই তাকে পুরো অ্যানেস্থেশিয়া (জেনারেল) দিয়ে সুন্নতে খাতনা করান চিকিৎসক। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২-এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাত দিন পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রায় ছয় লাখ টাকার। (ইত্তেফাক, ০৯ জানুয়ারি ২০২৪)।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর পরে জানা গেল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি ছিল অবৈধ। অর্থাৎ তার কোনো নিবন্ধন ছিল না। এমন কী এই নামে কখনো নিবন্ধনের আবেদনও করা হয়নি। ফলে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। (বিবিসি বাংলা, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আবুল হোসেন মো. মঈনুল আহসানের বরাতে ডেইলি স্টারের খবর বলছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গত বছরের আগস্টে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও ত্রুটি থাকায় আবেদনটি অনুমোদিত হয়নি; কিন্তু নিবন্ধন না করেও এতদিন হাসপাতালটি কীভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে, এ বিষয়ে তার ভাষ্য: ‘হাসপাতালটি আমাদের ডেটাবেজে না থাকায় আমরা এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। একটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল নিবন্ধিত হওয়ার পরেই তত্ত্বাবধানে আসে। ’
আরও বিস্ময়কর খবর আসে এর দুদিন। একটি অনলাইন পোর্টালের খবর বলছে, রাজধানীর গুলশানে যে অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতালের অধীনে মেডিকেল কলেজটি পরিচালিত হতো, সেটির লাইসেন্সেও মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে গত বছরের জুন মাসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাতে ওই খবরে লেখা হয়েছে: দেশে আরও এমন বড় হাসপাতাল রয়েছে, তারা অন্তত আর যাই করুক, লিগ্যাল ইস্যুগুলোতে খুবই সিনসিয়ার। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতাল এদিকে ভ্রূক্ষেপই করে না। (সকাল সন্ধ্যা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪)।
প্রশ্ন উঠছে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন? কী পরিমাণ টাকা তারা এরই মধ্যে এই কলেজকে দিয়েছেন? বেসরকারি কলেজে মেডিকেলে পড়া বিশাল খরচের ব্যাপার। ফলে যদি কেউ ভর্তি হয়ে থাকেন তাহলে তারা তাদের টাকা ফেরত পাবেন কি না এবং যদি তাদের এক বছর বা তার কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, এ ক্ষতি তারা কীভাবে পোষাবেন? তারা কি অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারবেন? নিবন্ধন ছাড়া অবৈধভাবে যে হাসপাতালটি এতদিন চিকিৎসা করল, এই সময়ের মধ্যে আরও কত মানুষ এখান থেকে কতভাবে ভুক্তভোগী হয়েছেন সেটি কি জানা যাবে? কেননা সুন্নতে খতনা করাতে আসা শিশু আয়ানের মৃত্যুর পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে তারা আয়ানকে ভর্তি করালেও তাদের হাতে ৬ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, গত এক বছরের মধ্যে এরকম কতজন এই হাসপাতালে এসে ভিকটিম হয়েছেন? কতজনের এরকম গলা কাটা হয়েছে–এসব বিষয়ে কি এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খতিয়ে দেখবে?
তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এরকম অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজের সংখ্যা কত? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছেও এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তার মানে কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরে তা নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি তোলপাড় হয় এবং তার সূত্র ধরে যদি অনুসন্ধান হয়, তখন ওই হাসপাতাল, ক্লিনিক বা মেডিকেল কলেজের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তার আগে নয়। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজের একটি খবরে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৪৩ বেসরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করেছে; কিন্তু নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা থাকলেও অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।
তার মানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে নিয়মিত মনিটরিং থাকা দরকার, দেশের জেলা উপজেলা শহরেও যেসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে, সেগুলো সঠিক নিয়মে নিবন্ধন পেয়েছে কি না; নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেছে কি না; সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ঠিকমতো কাজ করে কি না; পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যোগ্য ও দক্ষ কি না–এসব দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা সেই কাজটি করছেন না। তারা হয়তো জনবল সংকটের দোহাই দেবেন। বাজেটের অপ্রতুলতার কথা বলবেন। কিংবা ‘আমরা খতিয়ে দেখছি’ জাতীয় গালভরা বুলি আওড়াবেন। কার্যত মানুষের যা ক্ষতি হবার তা হয়ে যাচ্ছে। হতে থাকবে।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় না এবং প্রায়শই সেখানে ভুল চিকিৎসায় যে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, এসব এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। এরকম বাস্তবতায় অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো বন্ধের কথা জানিয়েছেন নবনিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সচিবালয়ে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে কোন ছাড় নয়। অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতালগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। আমার মেসেজ হচ্ছে যে এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য। (বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪)।
প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলামাত্রই কি অনুমোদনহীন সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই না। তবে সরকারের তরফে এই ঘোষণা বা এই অবস্থানটি পরিষ্কার করা খুব জরুরি ছিল। ডা. সামন্ত লাল সেন অন্তত সেই কাজটি করেছেন। প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানের খবর কি আমাদের চোখে পড়ে? প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব প্রতিষ্ঠান চলতে থাকে এবং কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটার পরে সেটি নিয়ে তোলপাড় হয় এবং তখন ওই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ কোনো একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার জন্য কাউকে না কাউকে প্রাণ দিতে হয়। যেমন ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে আয়ান নামে একজন শিশুকে প্রাণ দিতে হলো; কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কি দেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়মের মধ্যে চলে আসবে?
সব অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কি আগামীকাল সকাল থেকে তালা ঝুলবে কিংবা নিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েও কি মানুষ যৌক্তিক মূল্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে? এত সহজ নয়। একটি ঘটনার রেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এটা নিয়ে কথা হবে। সংবাদমাধ্যমে খবর হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ প্রতিক্রিয়া জানাবে; কিন্তু নতুন আরেকটি ইস্যু আসার সঙ্গে সঙ্গে শিশু আয়ানের কথা আমরা ভুলে যাব। আমরা ভুলে যাব যে আমাদের বাড়ি কিংবা অফিসের আশপাশেই অনিবন্ধিত কিংবা নিবন্ধিত অনেক কসাইখানা রয়েছে–যেখানে একজন অসুস্থ মানুষ গেলেই তাকে সুস্থ করার বদলে কতভাবে তার কাছ থেকে পয়সা আদায় করা যায়, সেই প্রক্রিয়া চলে। অতএব, এরকম একটি বিশৃঙ্খল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশে মোটামুটি অর্থবিত্তশালী মানুষ যে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যাবেন, সেটি অস্বাভাবিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা করেন তার দেশপ্রেমের কারণে। বাকিদের যে দেশপ্রেম নেই, তা নয়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে যান এখানের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ওপর ভরসা নেই বলে। অনেকে যান পয়সা খরচ করে মানসিক প্রশান্তির জন্য। কেউ কেউ যান মেডিকেল ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে। আর কেউ কেউ যান সমস্যা অনেক জটিল বলে; কিন্তু সাধারণ সমস্যা নিয়েও যদি মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে যান, তখন বুঝতে হবে সেই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি বৃহত্তর মানুষের কোনো আস্থা নেই। অতএব, আস্থা অর্জনই নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেছেন যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংকটগুলো তিনি জানেন; কিন্তু এও ঠিক যে, এক মেয়াদে সব সংকট সমাধান করা তার পক্ষে এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও কঠিন। তবে শুরুটা হওয়া দরকার। সেই শুরুটা হতে পারে দেশের অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করার মধ্য দিয়ে।
প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জন অফিস চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে এই তালিকা পাঠাতে পারে; কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে সর্ষের ভেতরে ভূত না থাকে। অর্থাৎ তালিকা প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি ঘুষ খেয়ে মুখ বন্ধ করে রাখেন, তাহলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও সঠিক তালিকা করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয় কাজ হতে পারে, এসব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কি না, সচল ও কার্যকর কি না এবং যারা এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের উপযুক্ত সার্টিফিকেট ও দক্ষতা আছে কি না–সেটি পরীক্ষা করা। যেখানে যেখানে ব্যত্যয় দেখা যাবে, সেখানে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথম তিন মাস যদি এই বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারেন, সেটি বিরাট কাজ হবে। তবে মনে রাখতে হবে, দেশের পুরো মেডিকেল খাতই বিরাট মাফিয়াতন্ত্রের হাতে জিম্মি। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় সাধারণত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাই কাজ করেন।
অনেক চিকিৎসক তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে বেশি সময় দেন–এই অভিযোগও বেশ পুরোনো। ফলে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নিয়মের মধ্যে আনতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে কোথাও কোথাও সাপও বেরিয়ে আসতে পারে। সেই সাপকে নিষ্ক্রিয় করার মন্ত্রী ও মন্ত্রী মহোদয়ের জানা থাকতে হবে। ডা. সামন্ত লাল সেন সেই মন্ত্র জানেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় কী পড়ানো হয়, কী শেখানো হয়, কোন প্রক্রিয়ায় শেখানো হয় এবং সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করে কতজন সত্যিই চিকিৎসক হয়–সেটি খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। কেননা এরকম গল্পও প্রচলিত আছে যে, বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করা ডাক্তার শোনার পরে অনেকেই সেই ডাক্তারের কাছে ইনজেকশনও নিতে ভয় পান। এটা হয়তো বাড়াবাড়ি কিংবা অতিরঞ্জিত গল্প; কিন্তু সমাজে এই জাতীয় গল্প প্রচলিত হওয়ার পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কেননা বেসরকারি মেডিকেলে পড়াশোনা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগে শোনা যায়। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ জায়গায়ও হাত দিতে হবে। তবে এসব জায়গায় হাত দিলে হাত পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।
ঢাকা মেডিকেলের ছোট্ট বার্ন ইউনিট আজকে সুবিশাল ইনস্টিটিউট। ডা. সামন্ত লাল সেনই এর নেপথ্য নায়ক। অতএব, হাত পুড়ে গেলেও তিনি এর চিকিৎসাটিও জানেন। তবে এও ঠিক যে, চিকিৎসকদের সংগঠন, তার প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণকারী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যদি তাকে সহযোগিতা না করেন; এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে যদি তারা সত্যিই আন্তরিক না হন, একা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে না। কেননা যেখানেই হাত দেবেন, সেখানেই দেখা যাবে কোনো না কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাকে চোখ রাঙাচ্ছে। তিনি হয়তো সেই চোখ রাঙানি উপেক্ষা করবেন; কিন্তু উপেক্ষা করে কাজটি শেষ পর্যন্ত করতে পারবেন কি না–সেটি বিরাট প্রশ্ন। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তিনি পারবেন। এতদিন কেউ পারেননি বলে ভবিষ্যতেও কেউ পারবেন না, সেটি নিশ্চয়ই নয়। পরিবর্তনের সূচনা হোক ডা.সামন্ত লাল সেনের হাত ধরেই।
লেখক: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে