উদ্বোধনী সংখ্যা ৩ : ফিরে দেখা ২০২৩
চন্দ্রজয় আর এআইয়ের সাফ্যলের সঙ্গে রয়েছে শঙ্কাও
বিখ্যাত জাপানি উপন্যাস ‘দ্য থ্রি বডি প্রবলেম’–কল্পকাহিনি হলেও অতি কল্পনার চেয়ে এখানে বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। এ কাহিনিতে দেখা যায় দেখা যায়, ভিনগ্রহের একটা সভ্যতা পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছে। তাদের দুর্বৃত্ত রাজা আক্রমণ করে মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দখল করে নিতে চায় পৃথিবীর উর্বরভূমি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যোজন-যোজন এগিয়ে মানুষের চেয়ে; কিন্তু তাদের গ্রহটা আমাদের মতো স্থিতিশীল নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সেখানে নিত্য ঘটনা। তাই পৃথিবীর সন্ধান পাওয়ার পর রাজার মনে হয়েছিল, যদি পৃথিবীতে সরিয়ে নেওয়া যায় তাদের সভ্যতা, তাহলে বড়সড় বিপর্যয় ছাড়া দীর্ঘদিন শান্তিতে বসবাস করতে পারবে তাদের উত্তর প্রজন্ম। যেহেতু ভূসভ্যতা অতটা উন্নত নয়, তাই সহজেই মানুষকে পরাজিত করে এ ধরাধাম দখল করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়; কিন্তু সাবধান করে দিয়েছিলেন তাদের রাজবৈজ্ঞানিক— তিনি হিসাব করে দেখেছিলেন, পৃথিবীতে তাদের নভোযান পৌঁছুতে সময় লাগবে চারশ বছর।
পৃথিবী এখন হয়তো বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে; কিন্তু তাদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অস্বাভাবিকভাবে বেশি। সেই বিজ্ঞানী যুক্তি দেখিয়েছিলেন, নিউক্লীয় শক্তি ব্যবহারের তিন দশকের মধ্যে যে সভ্যতা ইন্টারনেট আবিষ্কার করে ফেলে, চারশ বছর তাদের জন্য অনেক সময়, এর মধ্যে কতটা উন্নতি করবে পৃথিবীর মানুষ, সেটা তাদের জন্য অনুমান করাও কঠিন। কল্পবিজ্ঞানের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যদিয়ে আসলে লেখক একটা বার্তা ছুড়ে দিয়েছেন পাঠকদের কাছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির বার্তা; সে বার্তা যেমন সুখস্বপ্নে আপনাকে ভাসিয়ে দিতে পারে, আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেদের পায়ে কীভাবে নিজেরাই কুড়াল মারছি! উন্নতির লোভে আমরা দিনদিন বাস অযোগ্য করে তুলছি পৃথিবীটাকে, নিজেদের সঙ্গী করেছি নানাবিধ দূষণের। এর হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্য সে-ই বিজ্ঞানের কাছে হাত পাততে হবে আমাদের।
যাই হোক, দূষণ আর আর পরিবেশ বিপর্যয় আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নয়, আমরা আজ ২০২৩ সালটাকে ফিরে দেখতে চাই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা ঘটনাগুলোর দিকে একবার নজর দেব। বিজ্ঞানের চেয়ে প্রযুক্তি জগতেরই জয়জয়কার ছিল চলতি বছর; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। প্রযুক্তির এই শাখাটির ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরোনো; কিন্তু সেটা যদি ২০০০ সাল পর্যন্ত শম্বুকগতিতে চলে, তাহলে গুগলের আবির্ভাবের পর একটু একটু করে নিজের গতি বাড়িয়েছে; ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চলেছে এক্সপ্রেসে ট্রেনের গতিতে; তবে বর্তামানে সেটা ছুটছে সুপারসনিক বেগে। এতে একদিকে যেমন আশার আলো দেখছেন গবেষক-বোদ্ধারা, তেমনি পর্দার আড়ালে রয়েছে অন্ধকারের বার্তা! ২০২২ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে আবির্ভাব চ্যাটজিপিটির। আবির্ভাবেই ঝড় তোলে, একের পর এক রেকর্ড ব্রেকিং কার্যকলাপ করে অতীতের সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ছাপিয়ে যায়। চ্যাটজিপিটির আগে কিছু ঝড় তুলেছিল মিডিজার্নি এআই। মূলত দারুণ সব ছবি আঁকা আর গ্রাফিক্স ডিজাইনে পারদর্শিতার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি কুড়িয়েছিল এটি; কিন্তু চ্যাটজিপিটি এসেছে একের ভেতর সব নিয়ে। কী পারে না এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!
নিজেই গবেষণাপত্র লিখে এ বছরের শুরুর দিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই এআই। লেখা, ছবি আঁকা, অঙ্ক কষা, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ভিডিও তৈরিসহ হেন কাজ নেই, যা চ্যাটজিপিটি পারে না। চ্যাটজিপিটি আমাদেরও উদ্বুদ্ধ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার আমরাও শুরু করেছি জোর কদমে। বাংলাদেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রযুক্তিবিষয়ক খবর পড়েছে এআই প্রেজেন্টার অপরাজিতা। বাংলাদেশের জন্য এটা নিঃসন্দেহে মাইলফলক। অবশ্য প্রযুক্তির কালো দিকটাও এ বছর দেখেছে বিশ্ব। ব্যাঙের ছাতার মতো ভার্চুয়াল জগতের অলি-গলিতে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার এইআই। সবার উদ্দেশ্য তো আর সৎ হয় না। এসব এআই ব্যবহার করে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নকল ছবি ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জালে—জো বাইডেন থেকে নরেন্দ্র মোদি কিংবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও রেহাই পাননি নকলবাজদের হাত থেকে। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় শঙ্কা হয়ে উঠেছে ডিফফেক ভিডিও।
ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নকল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। রাজনৈতিক গূঢ় উদ্দেশ্য যেমন আছে, এসবের পেছনে, তেমনি মুনাফালোভী দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা নকল ডিপফেক পদ্ধতিতে পর্নোভিডিও বানিয়ে বিক্রি করছে—কেউ বা ব্যক্তিগত দন্দ্ব ও স্বার্থকে চরিতার্থ করতেও আরেকজনের ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন সমাজের চোখে। আর এর সবচেয়ে বড় শিকার সমাজের কিশোর-তরুণীরা। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টদের নিজস্ব এআই আছে বেশ আগে থেকেই, কিন্তু চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে জেনিমি নামে আনকোরা এক এআই লঞ্চ করেছে গুগল, গত ১৩ ডিসেম্বর।
পদার্থবিজ্ঞানেও এ বছরটা বেশ উল্লেযোগ্য। তবে বেশিরভাগই মহাকাশ ও প্রযুক্তিগত বিষয়ের জন্য বিজ্ঞানের এই বুনিয়াদী বিভাগটি আলোচনায় ছিল বছর জুড়ে। মহাবিশ্বের আরও গভীরে পর্যবেক্ষণ এবং সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য উন্মোচন করার জন্য ২০২১ সালে মাহকাশে স্থাপন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় নভোটেলিস্কোপ জেমস ওয়েবকে। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা এই টেলিস্কোপটি বিজ্ঞানীদের আস্থার প্রতিদান দিতে দেরি করেনি। গত বছরের মতো ২০২৩ সালেও জেমস ওয়েব মহাকাশের অজানা অংশের বেশকিছু গুরত্বপূর্ণ ছবি তুলেছে। মহাবিশ্বের জন্মের খবু কাছের দৃশ্যের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে টেলিস্কোপটি, এমন কিছু বিকিরণ বাবলের ছবি তুলেছে যেগুলো একেবারে মহাবিশ্বের জন্মের খুব কাছাকাছি সময়ে জন্ম হয়েছিল। ছবি তুলেছে মহাবিশ্বের এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো ব্ল্যাকহোলেরও।
মহাবিশ্বের প্রতিটা কণার বিপরীতে একটি করে অ্যান্টি-পার্টিকেল বা প্রতিকণা আছে। কণাগুলোর ভর সাধারণ কণাদের সমান হলেও চার্জ আলাদা। ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার ‘সার্নের’ বিজ্ঞানীরা একটা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন মহাকর্ষ বলের সঙ্গে প্রতিকণাগুলো মিথস্ক্রিয়া করে কিনা। সেই পরীক্ষা সফল হয়েছে; বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আসলেই অ্যান্টিম্যাটারও মহাকর্ষ বলে সাড়া দেয়। যদিও এদের মহাকর্ষীয় সক্রিয়তা সাধারণ বস্তুকণার চেয়ে এক-চতুর্থাংশ কম। এই পরীক্ষা কণাপদার্থবিজ্ঞান তো বটেই, মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বেও অনেক বড় ভূমিকার রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। পরমাণুর ছবি আমরা অহরহ দেখি; কিন্তু সেগুলো সব রংতুলি বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে বানানো। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের আর্গন ন্যাশন্যাল ল্যাবরেটরির একদল গবেষক এক্স-রে সাহায্যে নির্দিষ্ট একটা পরমাণুর ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। নিঃসন্দেহে কণাপদার্থবিজ্ঞানে এটা বড় একটা ঘটনা। এ ছাড়া মহাবিশ্বের প্রসারণ, ফিউশন এনার্জি, সময়ের মধ্যে ডাবল স্লিট পরীক্ষাগুলোও চলতি বছরে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বড় ব্রেকথ্রু।
বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও বেশ কিছু বড় ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে, যেগুলো হয়তো চিকিৎসাবিদ্যারই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালেটেকের একদল গবেষক যৌথভাবে মানুষের কৃত্রিম ভ্রুণ তৈরি করেছেন। এ জন্য তারা শুক্রাণু ব্যবহার করেননি, ব্যবহার করেছেন মানবদেহের স্টেম কোষ। যদিও এটা বেশিরভাগ দেশে আইনবিরুদ্ধ। তবে ঠিক কৃত্রিম মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে তৈরি নয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, মানব শরীরের স্বাভাবিক বিকাশ, জিনগত রোগ ও বার বার গর্ভপাতের কারণ অনুসন্ধানের জন্যই এটা করেছেন তারা। সারা বিশ্বের কিডনির জটিলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। শুধু বাংলাদেশেই প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যান। গোটা বিশ্বে এ সংখ্যাটা আরও ভয়াবহ! যদিও খরচসাপেক্ষ, তবু কিডনি প্রতিস্থাপন করে অনেক রোগীকে বাঁচানো যায়; কিন্তু এর একটা সমস্যা আছে, প্রায় ২০ শতাংশ কিডনিই প্রতিস্থাপনের আগেই নষ্ট হয়ে যায়। কিডনিদাতার শরীর থেকে অপসারণের কয়েকঘণ্টার মধ্যেই এ সব কিডনি অকেজো হয়, প্রতিস্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। তবে এ বছর এমন একটি গবেষণা হয়েছে, যা গবেষকদের আশাবাদী করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইঁদুরের শরীর থেকে কিডনি অপারেশনের পর প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তারা মানুষের কিডনিও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করার ব্যাপারে আশাবাদী; এর আগে অবশ্য আরও কিছু বড়সড় প্রাণীর কিডনি নিয়ে তারা গবেষণা করতে চান।
এত এত ইতিবাচকতার মধ্যেও নেতিবাচক কিছু ঘটনাও ঘটেছে বিজ্ঞানজগতে। মানবসভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এখন পরিবেশ বিপর্যয়। তবে এ বছর অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলনের হার ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ পৃথিবীর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদরা ক্রমাগত কথা বলছেন; কিন্তু বিশ্বমোড়লেরা যা থোড়াই কেয়ার করছেন না—এর নেতিবাচক ফল ফলতে শুরু করেছে। এমনকী ২০২৩ সাল ছিল সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর। অর্থাৎ গড় তাপমাত্রায় নতুন রেকর্ড করেছে পৃথিবী, ভেঙেছে ২০১৭ সালের রেকর্ড। এখুনি সচেতন না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণেই পৃথিবীতে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি নেমে আসতে পারে। সেই বিলুপ্তির হাত থেকে মানব প্রজাতি শেষমেশ টিকে থাকবে কি না, সে কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতে বেশ কিছু শোকাবহ ঘটনাও ঘটেছে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন কয়েকজন প্রথিতযশা বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ। কম্পিউটার জগতে মূরস’স ল খুব জনপ্রিয়, এই সূত্রের জনক গর্ডন মুর মারা গেছেন চলতি বছরের ২৪ মার্চ। ৭ নভেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন চাঁদের কক্ষপথে প্রথম অভিযান পরিচালনাকারী নভোচারী দলের প্রধান ফ্র্যাঙ্ক বোরম্যান। এ বছরই আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন লিথিয়াম ব্যাটারির উদ্ভবক জন গুডএনাফ (২৫ জুন), জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথ প্রদর্শক পল বার্গ (১৫ ফেব্রুয়ারি), পিডিএফ ফাইলের জনক জন ওয়ার্নকসহ (১৯ আগস্ট) অনেকেই। মৃত্যু দুঃখের সন্দেহ নেই; কিন্তু যাঁরা পৃথিবীর বুকে নিজের কাজ দিয়ে পায়ের ছাপ রেখে যান, তাদের মৃত্যু মহিমান্বিতই হয়ে রয়।
আমরা এখন উপসংহারে আসতে পারি। বিজ্ঞানজগতে ভালো-মন্দ মিলিয়েই কেটেছে ২০২৩ সালটা; কিন্তু এ বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক ঘটনা কী ছিল বলুন তো? আসলে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনাই করিনি; উপসংহার টানার জন্য রেখে দিয়েছিলাম। পৃথবীর অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’ বলছে এ বছরের সবচেয়ে উল্লেযোগ্য বৈজ্ঞানিক ঘটনা ছিল ভারতের চন্দ্রজয়। আমিও সেটা মনে করি—অনেক কারণেই। ভারত উন্নয়নশীল দেশ, সীমিত সামার্থ্য নিয়ে একটা দেশ মাত্র চতুর্থ জাতি হিসেবে চাঁদের বুকে নভোযান স্পর্শ করাল, এটা বড় কারণ তো বটেই; তবে এরচেয়ে বড় কারণ এর ব্যায়। বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ৮শ কোটি ব্যায়ে চাঁদে অবতারণের কথা কোনো উন্নত দেশ চিন্তাও করতে পারছে না এখনো। ভারত উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য চন্দ্রজয় কিংবা মহাকাশ অভিযানের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, চন্দ্রজয়ী অন্য তিন দেশের যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের চেয়ে ভারত একটা জায়গায় সবাইকে টেক্কা দিয়েছে—চাঁদের দক্ষিণমেরুজয়ী প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ ভারত। ভারতের এই দৃষ্টান্ত থেকে চাইলে আমরাও শিক্ষা নিতে পারি; কিন্তু সবার আগে ঢেলে সাজাতে হবে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যতদিন না সেটা করছি, ততদিন অন্যের সাফল্যেই আমাদের ঢেকুর তুলতে হবে; নতুন নতুন বছর শুধু আসবে আর যাবে!
লেখক: বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে