প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন
তামাক পণ্যে আরো বেশি করারোপ প্রয়োজন
মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। ধূমপানজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন মারা যায় প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষ। তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতি ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ধূমপান কমানোর জন্য সরকার অনেক দিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের স্বনামধন্য গবেষণা-প্রতিষ্ঠান ‘উন্নায়ন সমন্বয়’ প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, সিগারেট ব্যবহার কমিয়ে আনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো কার্যকর করারোপের মাধ্যমে এই ক্ষতিকারক পণ্যের খুচরা মূল্য বাড়ানো। তাতে করে এগুলোর সহজলভ্যতা কমবে। নাগালের বাইরে দাম বাড়লে মানুষ আর ধূমাপানে আসক্ত হবে না।
বাংলাদেশে প্রতি বছর অল্প করে সিগারেটের দাম বাড়লেও সে তুলনায় মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বেশি হওয়ায় সিগারেট সহজলভ্যই থেকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে এগুলোর ওপর কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা সামনে এনেছে বিভিন্ন তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি গবেষকরা। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। পাশাপাশি সিগারেট বিক্রি থেকে আসা করের পরিমাণও আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি হবে (প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বাড়তি কর)। আজ রোববার (১০ মার্চ) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সম্পূরক আলোচনা করেন তামাক-বিরোধী অর্থনীতিবিদদের মঞ্চ ‘বাংলাদেশ ইকোনমিস্টস ফর ইফেক্টিভ টোব্যাকো ট্যাক্সেশন (বিইইটিসি)’-এর পাঁচ জন অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন- ড. রুমানা হক (অধ্যাপক, অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), গোলাম আহমেদ ফারুকী (ডিন, ব্যবসা এবং ব্যবস্থাপনা অনুষদ, ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়), হোমায়রা আহমেদ (গবেষণা সহযোগি, বিআইডিএস) এবং ড. নাজমুল ইসলাম (সহযোগি অধ্যাপক, অর্থনীতি, বুয়েট)।
ড. আতিউর রহমান বলেন, নিম্ন স্তরের সিগারেট তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় নিম্ন আয়-শ্রেণির মানুষ এবং কিশোর-তরুণরাই এগুলো প্রধানত ব্যবহার করে থাকেন। তাই আসন্ন অর্থবছরে এই স্তরের সিগারেটের দাম শতাংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি (৩৩ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই স্তরের সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ১৯, ১৫, এবং ১৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখলেও খুচরা মূল্য বাড়ালে এগুলো বিক্রি থেকে আসা করের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সিগারেটের কারখানা বন্ধ না করে এবং যত্রতত্র সিগারেট বিক্রির বৈধতা দিয়ে শুধু করারোপ করে ধূমপায়ীর সংখ্যা কতখানি কমানো যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে ড. রুমানা হক বলেন, ‘ধূমপান-বিরোধী আন্দোলনের কারণে সরকার এখন আর কোনো নতুন সিগারট তৈরি কারখানার অনুমোদন দিচ্ছে না। উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান এবং সিগারেট বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগ নেই। তিনি ধূমপান-বিরোধী আইনের যথাযথ প্রয়োগ দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। ধূমপান-বিরোধী আন্দোলনে উন্নায়ন সমন্বয় দেশের নেতৃত্বস্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে