Views Bangladesh Logo

ঢাকার কাছেই বিপজ্জনক ফল্ট

ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রাজধানী

ভৌগোলিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে তিলোত্তমা ঢাকা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপে ঢাকাকে ভূমিকম্পের জন্য বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই শহর ঘণবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘ পরিচালিত রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুলস ফর ডায়াগনসিস অব আরবান এরিয়াস এগেইনস্ট সাইসমিক ডিজাসটার ২০২৩ সালের এক জরিপে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এ ছাড়াও ঢাকাকে ভূমিকম্পের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে দেখানো হয়েছে জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (টিআইটি) সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০২২ সালের এক গবেষণায়।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূতত্ত্ব) মো. আলী আকবর ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকায় ৮ বা ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন নেই। তবে ঢাকার অদূরে (৬০ কিলোমিটার দূরে) মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ফল্টলাইন আছে। আর সেখানে এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় রাতে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২ লাখ বা তার চেয়ে বেশি লোক হতাহত হতে পারে। আর দিনের বেলায় হলে সেই সংখ্যা হতে পারে দেড় লাখের কাছাকাছি। এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে রাজধানীর লক্ষাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে পারে কয়েক হাজার ভবন।’

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ঢাকা শহর ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে নরম ও লাল মাটি রযেছে। এ ছাড়া রাজধানীর বেশিরভাগ আবাসিক এলাকা বিভিন্ন ধরনের জলাশয় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। আর ভরাট করা ও নরম মাটিকে ভূমিকম্পের ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গ অনেক বেশি হয়। অন্যদিকে ঢাকার বেশিরভাগ ভবন মাঝারি বা তীব্র ভূমিকম্প প্রতিরোধক নয়। তাই এই শহরে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হবে।’

রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা- ১ থেকে ৪ দশমিক ৯৯ মৃদু, ৫-৫ দশমিক ৯৯ মাঝারি, ৬-৬ দশমিক ৯৯ তীব্র, ৭-৭ দশমিক ৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর ওপর হলে তাকে বলে অত্যন্ত ভয়াবহ। বুয়েটের গবেষকদের ভূ-কম্পন নিয়ে এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে জোন-১। দেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা এর আওতাভুক্ত।

জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ও কক্সবাজারের কিছু অংশ রয়েছে জোন-১-এ। মাঝারি মাত্রার ঝঁকিতে থাকা জোন-২-এর আওতায় আছে- ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, ফেনী, নাটোর, মেহেরপুর ও মাগুরা অঞ্চল; যা দেশের ৪১ শতাংশ এলাকা। এ ছাড়া ভূমিকম্পের নিম্ন ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ১৬ শতাংশ এলাকা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগ, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলা ও এসব অঞ্চলের দ্বীপ ও চরগুলো ভূমিকম্পের নিম্ন ঝুঁকিতে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট-ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরির ভূতাত্ত্বিক বিভাগে ২০২৪ সালে এক গবেষণায় বাংলাদেশের ভূমিকম্পের বিষয়ে জানান, ‘বাংলাদেশের নিচে টেকটনিক প্লেটে প্রায় ৪০০ বছর ধরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই চাপ যখন মুক্ত হতে যাবে বা হবে, তখন এই এলাকায় যে ভূমিকম্প হবে, তার মাত্রা পৌঁছতে পারে ৮ রিখটার স্কেলে। এতে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হবে। হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে অতীত সব রেকর্ড।’





মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ