Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের একীভূত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল ঢাকা

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসে সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএমসহ সব মানবিক সহায়তা সংস্থাকে অনুরোধ করেছেন।

গত ১৩ মার্চ জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৪ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও সতর্কতা পুনর্ব্যক্ত করে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ও চরমপন্থার ঝুঁকি থেকে উদ্ভূত হুমকি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তিনি বলেন, ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়িত্ব নিয়ে নীতি বাস্তবায়ন না করলে, শুধু বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ডব্লিউএফপির পক্ষে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম চালানো এবং সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। ক্রমবর্ধমান তহবিল সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের প্রতিশ্রুত অনুদান আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।

পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর এর গুরুতর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দেশটি গত ছয় বছর ধরে ১.১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সর্ববৃহৎ দাতা দেশ এবং ২০২২ সালেই ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের চাপ কমাতে বিকল্প পথ অনুসন্ধানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করে তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর ৩০ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নাকচ করে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ সমস্ত মানবিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন মাসুদ।

এই বছর জেআরপিতে ১৯৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১.৩৫ মিলিয়ন রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৮৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে জেআরপি-২০১৪ এর প্রথম কৌশলগত উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই হবে এই সংকটের টেকসই সমাধান।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গা ও নিজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিতে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ক্রেডিট তহবিল থেকে অনুদান ও ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

হাই কমিশনার আরও বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ জেআরপির সম্পূরক তহবিল স্ফীত করবে।

মানবিক সহায়তা তহবিলের ক্রমবর্ধমান তহবিল ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ জানান আইওএম মহাপরিচালক এমি পোপ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে অনেক ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে তাদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এই জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াও কক্সবাজারের বাস্তুসংস্থান ও জীব-বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উপস্থিত প্রতিনিধিগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বিশেষ করে উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল কক্সবাজারেই ছয় হাজার হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমির অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করতে বলেন।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ