Views Bangladesh Logo

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক কি ভুল সময়ে মারা গেলেন?

Amin Al  Rasheed

আমীন আল রশীদ

জীবনের সোনালি সময় কেটেছে যে ক্যাম্পাসে, মৃত্যুর পরে সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হলো না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। শুক্রবার জুমা নামাজের পরে রাজধানীর ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়েছে আজিমপুর কবরস্থানে।

প্রিয় ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ নেয়া হয়নি; কিন্তু কেন? তিনি কি ভুল সময়ে মারা গেলেন? আরেফিন সিদ্দিক যদি ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ মারা যেতেন- তাহলে পরদিন ১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কী কী ঘটতো?

১. সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ নেয়া হতো। হাজার হাজার মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন। তার আত্মীয়-স্বজনের বাইরেও সহকর্মী, শিক্ষার্থী, বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেন। মাইকে তখন একের পর এক ঘোষণা আসত যে, কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি, দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষই হয়তো এই আয়োজনটি করত। না হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

২. পুরো আয়োজনটি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো লাইভ বা সরাসরি সম্প্রচার করত। শুক্রবার যেহেতু অন্যান্য সংবাদের চাপ কম থাকে, ফলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আরেফিন সিদ্দিকের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনটি দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি দেখাত।

৩. শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আরেফিন সিদ্দিকের মরদেহ নেয়া হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। জুমার নামাজের পর সেখানে বিশাল জানাজা হতো। হাজার হাজার মানুষ তাতে অংশ নিতেন। মানুষের সেই লাইন হয়তো মসজিদের বাউন্ডারির বাইরে রাস্তায় ছড়িয়ে যেত। একদিকে শাহবাগ, আরেক দিকে টিএসসি, এমনকি সেই লাইন হয়তো দক্ষিণে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পৌঁছে যেত। যারা এই লেখাটি পড়ছেন, হয়তো তাদেরও অনেকে স্যারের জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য যেতেন।

৪. আজিমপুর কবরস্থান থেকেও হয়তো অনেক গণমাধ্যম সরাসরি সম্প্রচার করত এবং সন্ধ্যার প্রাইম বুলেটিনে (প্রধান খবর) স্যারের মৃত্যুর সংবাদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হতো। ওইদিন রাতের টকশোগুলোতে আরেফিন সিদ্দিকের সাবেক সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই তার স্মৃতিচারণ করে কথা বলতেন।

৫. আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করতেন; কিন্তু তার মৃত্যুটি ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ হওয়ায় এর কিছুই হয়নি। এমনকি রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানা যায়নি। দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপিঠের সাবেক একজন উপাচার্যের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা বা সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শোক জানালে কি তারা ছোট হতেন?

শেষ যাত্রাটি কেন এমন হলো?

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের শেষ যাত্রাটি কেন এমন দুঃখজনক হলো? এটি কি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তথা রাজনৈতিকভাবে বিভক্তির হাত থেকে যে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও মুক্ত হতে পারল না- তারই বহিঃপ্রকাশ? আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রাজনৈতিক দল সমর্থন শুধু নয়, সরাসরি রাজনীতি করতেও আইনি বাধা নেই। সুতরাং একজন শিক্ষক যদি কোনো দলকে সমর্থন করেন, সেটি খুব অস্বাভাবিক নয়। আবার তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক বলেই যে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বানানো হয়েছিল, সেটিও পরিষ্কার।

কেননা বছরের পর বছর ধরে এই পদটিকে রাজনৈতিক চেয়ারে পরিণত করা হয়েছে। নির্দলীয় লোক- তাতে তিনি যত যোগ্যই হোন না কেন, তাকে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি এমনকি কোষাধ্যক্ষও যে বানানো হয় না- এই চর্চাটি অনেক বছর ধরেই চলে আসছে। ফলে যারা দলীয় বিবেচনায় এসব পদে নিয়োগ পেয়েছেন, তারা ওই দলের তথা সরকারের অনুগত থেকেছেন। সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন।

কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে; কিন্তু আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। তার বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ তিনি প্রচুর ডিপার্টমেন্ট খুলেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলোই অপ্রয়োজনীয়। এসব বিভাগে তিনি দলীয় লোকদের চাকরি দিয়েছেন। এই অভিযোগের কিছু সত্যতা হয়তো আছে; কিন্তু পক্ষান্তরে এটিও ঠিক যে, প্রচুর নতুন বিভাগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রচুর লোকের চাকরিও হয়েছে। সেই চাকরির প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল কি না; নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে কি না; হলে আরেফিনি সিদ্দিক নিজে সেই দুর্নীতির কতটা ভাগ পেয়েছেন বা এসব কাজ শুধু তার একক সিদ্ধান্তে হয়েছে কি না- সেগুলো গভীর অনুসন্ধানের বিষয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরেফিন সিদ্দিকের আপত্তি ছিল। অর্থাৎ মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থীরা যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারেন, তিনি সেই চেষ্টা করতেন; কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। কেননা তিনি যতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন, সেই সময়ে প্রচুর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।


তাহলে আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ কি এই যে, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন এবং গণঅভ্যুত্থানের মুখে সেই দলটির পতন হওয়ার কারণে তার মরদেহটি ক্যাম্পাসে বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হলো না বা নিতে দেয়া হলো না?

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করেছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ফেসবুকে লিখেছেন এবং তার সেই লেখাটি অসংখ্য মানুষ শেয়ার করেছেন যে, আরেফিন সিদ্দিকের পরিবারেই তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিতে রাজি হয়নি। এটাকে তিনি একধরনের সেলফ সেন্সরশিপ বলছেন। অথচ বৃহস্পতিবার রাতেই আরেফিন সিদ্দিকের এক ভাই যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে মরদেহ ক্যাম্পাসে নেয়া হবে।

পরিবার কী চাইলো বা চাইলো না, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি চেয়েছে যে আরেফিন সিদ্দিকে মরদেহ ক্যাম্পাসে বা শহীদ মিনারে নেয়া হোক? একজন সাবেক উপাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনটি তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই করার কথা ছিল। কিন্তু তারা এই আয়োজন করেনি এবং কেন করেনি, এ বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা দিয়েছে বলেও এখন পর্যন্ত (শুক্রবার বিকেল ৩টা) শোনা যায়নি। তার মানে এটি কি পুরোনো সংস্কৃতিরই (অপসংস্কৃতি) ধারাবাহিকতা?

পুরোনো পথের রেখা…

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং টেলিভিশনের আলোচিত বক্তা পিয়াস করিমের মরদেহও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিতে দেয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো, প্রধানত ছাত্রলীগের প্রতিবাদের মুখে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়া যায়নি। ওই সময় গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের ব্যক্তি হিসেবে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়া প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। তার কফিন শহীদ মিনারে নেয়া ঠেকাতে সেখানে ‘পথচিত্র’ অঙ্কন করেন একদল চারুশিল্পী। শহীদ মিনারের উত্তর পাশের সিঁড়ির আগে তারা লিখে দেন- ‘কোনো পাকি দালালের লাশ বইবে না পবিত্র শহীদ মিনার, লাশ নিয়ে যা পাকিস্তান।’

শুধু পিয়াস করিম নন, ওই সময় শহীদ মিনারে আরও ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা), পিয়াস করিমের স্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, মতিউর রহমান চৌধুরী, নূরুল কবির, গোলাম মোর্তজা এবং আইনজীবী ড. তুহিন মালিক। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক কি তাহলে ওই প্রতিহিংসার রাজনীতির ধারাবাকিতারই শিকার হলেন?

ব্যক্তি আরেফিন সিদ্দিক

রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কী করেছেন, তার বাইরে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক একজন সজ্জন, বিনয়ী ও ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম না বলে তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক নন। কিন্তু টেলিভিশনে আমার একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি আলোচক হিসেবে এসেছেন। তার আগে যখন রেডিওতে কাজ করতাম, তখনও অনেক বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ হয়েছে। তাতে তাকে একজন স্নেহবৎসল ও সংবেদনশীল মানুষ বলেই মনে হয়েছে।

তার চেয়ে বড় কথা, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে তার প্রথম ও প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক। সেই শিক্ষক হিসেবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময় কেটেছে যে ক্যাম্পাসে, সেখানে তার মরদেহ নেয়া উচিত ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই এই উদ্যোগটি আসা দরকার ছিল; কিন্তু বর্তমান প্রশাসন সেটি না করে নিজেদের কূপমণ্ডূকতার পরিচয় যেমন দিয়েছেন, তেমনি এটিও প্রমাণ করল যে, তারা বিগত দিনের দলবাজির বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি।

আরেফিন সিদ্দিকের সহকর্মী ছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অধ্যাপক সি আর আবরার। আরেক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার সরাসরি না হলেও পরোক্ষ ছাত্রী। যেহেতু আরেফিন সিদ্দিকের শিক্ষকতাকালীন রিজওয়ানা হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়েছেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদও তার পরোক্ষ ছাত্র। এই সরকারটি সরাসরি রাজনৈতিক সরকার নয়। একটি দলনিরপেক্ষ সরকারের আমলে দেশের একজন খ্যাতিমান শিক্ষকের সঙ্গে যে আচরণ করা হলো, সেটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং রাজনীতিতেও একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। যে সরকারের লোকেরা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা সংস্কার সংস্কার বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে- সেই সরকারের আমলে শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে একজন সাবেক উপাচার্যের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হলো না বা নেয়া গেলো না- এটি অত্যন্ত বেদনার ও লজ্জার।

ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে…

যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের মনে রাখতে হবে নদীর জল একই জায়গায় স্থির থাকে না। রাজনীতিতে পালাবদল ঘটে। গত বছরের আগস্টের ৪ তারিখও দেশের অধিকাংশ মানুষ কল্পনা করেনি যে আওয়ামী লীগের মতো একটি বিরাট দলের পতন হয়ে যাবে এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে; কিন্তু সেটিই ঘটেছে। সুতরাং আগামী এক বছর পরে দেশে কী ঘটবে, তা আমরা জানি না। পাঁচ বছর পরে দেশে কোন দল ক্ষমতায় থাকবে, তা এখনই বলা কঠিন। সুতরাং আজকে যারা সরকারে আছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসিসহ প্রশাসনের বড় পদে আছেন, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন, আপনার যখন মারা যাবেন, তখন যদি দেশে আপনাদের সমর্থিত দল বা সরকার ক্ষমতায় না তাকে, তখন আপনাদের মরদেহও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা প্রিয় ক্যাম্পাসে নেয়া হবে না- এটিই হলো ইতিহাসের শিক্ষা।

বাস্তবতা হলো, একজন বিশিষ্ট নাগরিক, তিনি হতে পারেন শিক্ষক, কবি, লেখক, সাংবাদিক বা রাজনীতিবিদ- তার সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় না থাকলে রাষ্ট্র তার মৃত্যুর পরে উপযুক্ত সম্মান দেবে না; এমনকি তার প্রতিষ্ঠানও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে না- এটি কোনো সভ্য রাষ্ট্রে চলে না। একজন মানুষের রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরেও একটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থাকে। রাজনৈতিক আদর্শের কারণে বা মতাদর্শ ও মতভিন্নতার কারণে তার সমস্ত সম্পর্ক বাতিল হয়ে যেতে পারে না। তিনি যে দল ও মতেরই সমর্থক হোন না কেন, মৃত্যুর পরে তাকে বিবেচনা করা উচিত তার কাজ দিয়ে এবং ব্যক্তিজীবনে তিনি কেমন ছিলেন- সেটি দিয়ে। সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি টেনে আনলে দেশে শুধু রাজনীতিই থাকবে, মানুষ থাকবে না।

আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ