বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধেই বৈষম্যের অভিযোগ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জনের পরই তা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রনেতারা বলছেন, আন্দোলনকে ভর করে একটি রাজনৈতিক দল গঠন হওয়ার উদ্দেশ্য ভালো নয়। কারণ তারা আন্দোলনকে নিজেদের সম্পদ বলে দাবি করবে বা করছে। এটা আন্দোলনে অংশ নেয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বঞ্চিত করার একটি অপচেষ্টা।
গত বছরের ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার অনুমোদিত বগুড়ায় একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১৭ সদস্যর সেই কমিটিতে সমন্বয়কদের মধ্যে ছিলেন নিয়তি সরকার নিতু ও সাব্বির আহম্মেদ রাজ। তাদের মধ্যে নিতু ছাত্রফ্রন্টের বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সদস্য সচিব ও জেলা কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক। আর সাব্বির আহম্মেদ রাজ ছাত্র ইউনিয়নের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি।
নিয়তি সরকার নিতু বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করে আমরা আন্দোলনে অংশ নেই। আমাদের লক্ষ্য ছিল সামাজিক বৈষম্য দূর করা। একটা সময় গিয়ে এই আন্দোলন সরকার পতনে রূপ নেয়। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে ছিলাম; কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও আন্দোলনের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেবে। সেইসঙ্গে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে; কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা নিজেরাই সরকার হয়ে বসে আছেন। এরপরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজে আমাদের সমর্থন থাকবে। '
নিতু আরও জানান, শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকার পতন হয়নি। দেশের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনটি সফলতাকে শুধু নিজেদের অর্জন বলে দাবি করার চেষ্টা করছে।
ছাত্র ইউনিয়নের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ রাজ বলেন, 'আমরা শুধু শিক্ষার্থী পরিচয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের আশা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অরাজনৈতিক সংগঠনই থাকবে। এমনটাই কথা ছিল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের; কিন্তু পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায়, কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা সেকথা বললেও গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো শুরু করেন। পরবর্তীতে আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার থেকে বের হই। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কারণে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা আলাদা হয়ে গেছেন। অথচ তাদের উচিত ছিল অরাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকা।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ জনগণ বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারই ভালো ছিল। এভাবে চলতে থাকলে আমরা যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের ওপর জনগণের ভিন্ন ধারণার সৃষ্টি হবে। যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।'
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া অন্তত ২০ জন শ্রমিক-জনতার সঙ্গে কথা বলা হয়।
তারা জানান, আন্দোলনে সব শ্রেণি পেশার মানুষ একত্র হওয়ায় সফলতা আসে। এখন যারাই কৃতিত্ব এককভাবে নেয়ার চেষ্টা করবেন এক পর্যায়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী ঢাকা উল্কা রেফ্রিজারেশনের স্বত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'ছাত্র-শ্রমিক ও জনতার অংগ্রহণে আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, আন্দোলনকে ভর করে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। যদি তা হয়, তাহলে এতে দেশের জন্য ভালো কিছু হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক সংগঠন না করে শিক্ষার্থীরা যদি নির্বাচিত সরকারের পাশে থেকে জনকল্যাণমুখী কাজ করতেন এতে দেশের মঙ্গল হতো। এখন কতিপয় সমন্বয়কের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা থেকে দূরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'
ছাত্র ইউনিয়নের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ রাজ বলেন, 'জামায়াত-শিবিরসহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের মদদদাতা। সম্প্রতি আদিবাসীদের ওপর হামলা হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। অথচ প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে যত রাতই হোক তারা আন্দোলনে নামছেন। এতে তাদের উদ্দশ্য আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে অনেকটা সরে গেছেন বলেও দাবি করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সাব্বির আহম্মেদ রাজ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে