Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আলু সিন্ডিকেট দূর করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

আলু আমাদের জীবনে অত্যন্ত দরকারি একটি সবজি। এমন কোনো তরকারি নেই, যার সঙ্গে আলু মিশে যায় না। ভাতের পরেই সম্ভবত আলুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে ভাতে-আলুতে বাঙালি। কারণ, অনেক বাঙালিই এখন আর নিয়মিত মাছ খেতে পারে না; কিন্তু আলু ছাড়া এক দিনও চলা কঠিন। আর কোনো তরকারি ঘরে না থাকলে অনেক পরিবার আলুভর্তা বানিয়েই ভাত খেয়ে ফেলে। সেই আলুও এখন অনেকের কাছে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রায় চিকন চালের দামের সমান, মোটা চালের চেয়ে বেশি। এই অবস্থায় নিম্নআয়ের মানুষের আলুও খেতেও হিসাব করতে হয়।

আলুর এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেট। গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোল্ড স্টোরেজে আলুর পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও সিন্ডিকেট করে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে আলু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ১০ জেলায় মানববন্ধন করেছে বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস) ও এর যুব শাখা ‘কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি)। একই দাবিতে ওইসব জেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, রংপুর, মৌলভীবাজার ও কিশোরগঞ্জে এ কর্মসূচি করেন সিসিএস ও সিওয়াইবির স্বেচ্ছাসেবীরা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিগত ১ মাস ধরে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অসাধু ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজকেন্দ্রিক কূটকৌশলের মাধ্যমে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে ফেলেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মজুতদাররা আলু সংগ্রহ করে কোল্ড স্টোরেজে রেখেছেন। ওই সময় তাদের আলুর ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। কোল্ড স্টোরেজে রাখার খরচ ৬০ কেজির বস্তাপ্রতি অঞ্চলভেদে ১৮০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা।

সিসিএসের পক্ষ থেকে নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতীয়মান হয়েছে যে, দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এবার আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি টনের বেশি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোল্ড স্টোরেজে ৪০ লাখ টনের বেশি আলু মজুত রয়েছে; যা বছরের বাকি সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত; কিন্তু মজুতদাররা সরবরাহ হ্রাস করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হিমাগার থেকে বেশি মূল্যে আলু বিক্রয় করছে এবং ক্রয়-বিক্রয়-সংক্রান্ত পাকা রসিদ সংরক্ষণ ও সরবরাহ করছে না।

এমতাবস্থায়, কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে অবৈধ বিপণন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হিমাগার ম্যানেজার, দলিল ক্রেতা-বিক্রেতা, ফড়িয়া/মধ্যস্বত্বভোগী ব্যাপারীর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট/অভিযান জোরদার করে আলুর মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে আনার অনুরোধ জানানো হয়। সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যদ্রব্যেরই দাম সারা বছর ধরেই ঊর্ধ্বগতিতে থাকে। মৌসুমের সময়ও আলু-পেঁয়াজ-ডালের দাম খুব একটা কমে না। এর কারণ মজুতদাররা তখন সস্তা দরে বেশি করে পণ্য ক্রয় করে হিমাগারে মজুদ করে রাখে, পরে তা বেশি দামে বিক্রি করার জন্য।

সরকারিভাবে যদি এসব জরুরি পণ্য মজুত করে রাখা হতো এবং পরে প্রয়োজনের সময় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হতো, তাহলে সিন্ডিকেটের এমন আস্ফালন হতো না; কিন্তু বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও এই সিন্ডিকেটের কখনো পরিবর্তন হয় না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই এই সিন্ডিকেট ভাঙা হোক। আলুর দর জনগণের হাতের নাগালে রাখা হোক। চালের মতোই আলুও একটি স্পর্শকাতর খাদ্যদ্রব্য। আলু নিয়ে যেন এমন অরাজকতার সৃষ্টি না হয়, তার দিকে সরকারকে কড়া নজর দিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ