সিন্ডিকেট থামিয়ে পেঁয়াজের ঝাঁজ কমান
মাছ, মাংস, সবজি- যা-ই রান্না করা হোক না কেন, পেঁয়াজ তাতে অপরিহার্য। সেই পেঁয়াজেরই পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পারদে তাপ দিলে যেমন তার উত্তাপ বাড়ে, সেরকমভাবে দিন দিন একটু একটু করে কেজিপ্রতি ২৮ টাকা উৎপাদন খরচের পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ১৫০ টাকা ছুঁইছুঁই। মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
সিন্ডিকেটের হাত থেকে কি আর এই জাতির মুক্তি নেই? শোষণের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে আমরা লিখি, এক সময় এদেশ থেকে লুট করে নিয়ে গেছে মগরা। তারপর ইংরেজরা। তারপর পাকিস্তানিরা; কিন্তু আজ কে লুট করছে আমাদের অর্থ-সম্পদ? সিন্ডিকেটের নামে সাধারণ নাগরিকদের ফকির বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা তো ব্রিটিশ আমলের কর-খাজনার মতো ডাকাতি।
গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জেও দাম বাড়ছে এক সপ্তাহ ধরে। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকা।
চট্টগ্রাম, বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে প্রথম ধাপে দাম বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা। এর পরের ধাপে দাম বাড়াচ্ছে কমিশন এজেন্টরা। তৃতীয় ধাপে দাম বাড়াচ্ছে পাইকারি মোকামের ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে যেতে যেতে আরও দু-তিন দফায় বেড়ে যাচ্ছে দাম। সব মিলিয়ে ৬০ জনের মতো ব্যবসায়ী এ সিন্ডিকেটে জড়িত।
পেঁয়াজ বাঙালির খাদ্যের প্রধান রসনা। পেঁয়াজ ছাড়া কোনো তরকারিই রান্না করা যায় না। পেঁয়াজ নিত্য খাদ্যদ্রব্য। সেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন দিশাহারা। এমনিতেই সব পণ্যের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ কোনোরকমে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। সেখানে পেঁয়াজের বাড়তি মূল্য আরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
মূলত আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মধ্যে অতি মুনাফার প্রবৃত্তি ও জনগণের পকেট কাটার প্রবণতা আছে। এ কারণে সমস্যাগুলো ঘুরেফিরে আসে। কখনো আমদানি জটিলতা, কখনো ফলন কম, কখনো রপ্তানিকারক দেশে দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি অজুহাত দাঁড় করিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নিয়ে প্রতি বছর তুঘলকি কাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি, গত কয়েক বছর দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে স্থল-নৌ, এমনকি আকাশপথেও এই নিত্যপণ্যটি আনতে হয়েছে।
সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যেভাবেই হোক সিন্ডিকেট থামিয়ে, পেঁয়াজের ঝাঁজ কমান। পেঁয়াজ কাটতে গেলে অনেকের চোখে পানি আসে। এখন পেঁয়াজ কিনতে গেলেই চোখে পানি আসে। মানুষের চোখের পানি থামান।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে