তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের
তামাক শুধু সেবনকারীর সর্বনাশই করে না, এটি এর আশেপাশে থাকা অধূমপায়ীদেরও ক্ষতি করে সমানহারে। তামাকের ভয়াল ছোবলে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার প্রাণ ঝরে যায়। তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচতে তামাক নির্মূল করা করা অতীব জরুরি। এজন্য প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করে দেশ থেকে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নারী সংসদ সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরবৃন্দ।
বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রী’র আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলমের সভাপতিত্বে এই সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জারা জাবিন মাহবুব, এমপি (নারী আসন-৭)। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন আবদুস সালাম মিয়াহ, প্রোগ্রামস ম্যানেজার,সিটিএফকে-বাংলাদেশ। এছাড়াও সভায় স্থানীয় বিভিন্ন জনপ্রতিণিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, “তামাক নারীস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাক নিয়ন্ত্রণের নানান দিকগুলোর পাশাপাশি নারী ও শিশুদের নিয়ে ভাবাও একান্ত জরুরি। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারী ও শিশুরা অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশে ধূমপান না করেও বছরে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবে নারী ও শিশুরাই সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে গর্ভধারণ ক্ষমতা লোপ পাওয়া, কম ওজনের বা মৃত শিশু জন্মদান,অকাল সন্তান প্রসব, জরায়ু ক্যানসারসহ ঋতুস্রাবের নানান জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় নারীদের। এছাড়াও কম স্মৃতিসম্পন্ন সন্তান প্রসব করার সম্ভাবনাও তামাক সেবনের ফলে হতে পারে। এই বিষয় সম্পর্কে আমাদের অনেকটাই অজানা। এছাড়া সিগারেটের ধোঁয়া শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ । কারণ ধূমপানের ধোঁয়া সহজেই শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হাঁপানিসহ নানান ধরনের রোগ সৃষ্টি করে থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সচেতনতা, পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নারীর কণ্ঠস্বরকে বলিষ্ঠ করার জন্য আমাদের সবাইকে একত্র হতে হবে।”
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আবদুস সালাম মিয়াহ বলেন, “টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮-এর তথ্যমতে, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে।”
তিনি আরোও বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত খসড়াতে ধূমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, খুচরা বিড়ি-সিগারেট বিক্রি বন্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ ও সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তার পরিসর ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইনটিকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে তামাকের কারণে একদিকে যেমন মৃত্যুহার কমবে অপরদিকে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নও ঘটবে।”
সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব বলেন, “তামাকের প্রতি আসক্তি যুবসমাজকে ফেলে দিচ্ছে এক অন্ধকারজগতে। অল্প বয়সেই শিশু-কিশোররা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ভয়ঙ্কর শারীরিক অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পরছে তারা। বর্তমানের যুগে মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো সচেতনভাবেই কিশোরদের টার্গেট করে থাকে। ধূমপান নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলোর এই কূটকৌশল বন্ধ করতে না পারলে বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। আর এই বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন শক্তিশালী করার মাধ্যমে তামাককে নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।”
বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত। তামাক কোম্পানিগুলো মনে করে যে, অল্প বয়স থেকেই যদি এই প্রজন্মকে সিগারেট ব্যবহার শুরু করিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা অন্তত ৬০ বছর পর্যন্ত সিগারেট সেবনের অভ্যাসে জড়িয়ে পড়বে। তাই তামাক কোম্পানিগুলোর প্রধান লক্ষ্যই থাকে এই তরুণ প্রজন্মকে আসক্ত করা। তাই এই দেশকে অধঃপতনের হাত থেকে বাঁচাতে হলে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলম।
তিনি আরো বলেন, “আমাদের তরুণসমাজকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের অসচেতনতার কারণে আমাদের পরিবার, আমাদের সন্তানেরা যাতে হুমকির মুখে না পরে সেজন্য আমাদের নিজ থেকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।” তামাকবিরোধী সকল কার্যক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নারী মৈত্রীর পাশে থাকাবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
সভায় তামাকের ক্ষতিকর দিক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পক্ষে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। আগত অতিথিদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর খালিদ বিন ইউসুফ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে