Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পেছনের আসনে বসলে কি বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি?

Kamrul  Ahsan

কামরুল আহসান

সোমবার, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

ত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে আজ ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গত ১১ দিনে অন্তত ৬টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২২১ জন। বিশেষ করে ২৫ ডিসেম্বর আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান চেচনিয়ার গ্রোজনিতে এবং ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিমানবন্দরে ১৮১ জন যাত্রীসহ একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় যাত্রীবাহী বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত বিমানের ১৮১ যাত্রীর মাত্র ২ জন বেঁচে ছিলেন। সৌভাগ্যবশত আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ২৯ জন বেঁচে ফিরেছেন। ২৯ জানুয়ারি আরব আমিরাতে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সমুদ্রে পড়ে, এতে পাইলট ও কো-পাইলট ২ জন নিহত হন।

সর্বশেষ ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বাণিজ্যিক ভবনের ওপর একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কমপক্ষে দুজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা থেকে বিমান নিরাপত্তা নিয়ে যেমন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, তেমনি বিমান বিধ্বস্ত হলেও অন্তত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়েও গবেষণা হচ্ছে। সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিমানের পেছনে বসলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা সবাই ছিলেন পেছনের আসনের যাত্রী। দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের বেঁচে যাওয়া যাত্রী দুজনও ছিলেন বিমানের একদম পেছনের দিকে।

২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল, ‘১৯৮৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে দেখা যায় বিমানের পেছন দিকের তৃতীয়াংশের মৃত্যুর হার ৩২ শতাংশ, মাঝের অংশে ৩৯ শতাংশ, সামনের অংশে ৩৮ শতাংশ।’ বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, পেছন দিকের আসন নিরাপদ বেশি এটা একটা পুরোনো প্রবাদ। আসলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর যাত্রীদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে দুর্ঘটনার ধরনের ওপর। কারণ অনেক সময় দেখা যায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব যাত্রীই মারা গেছে। সৌভাগ্যবশত অনেক সময় সব যাত্রীই বেঁচে যান।

ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশেনের প্রেসিডেন্ট হাসান শাহিদী বলেছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বেঁচে থাকার সঙ্গে আসনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। প্রতিটি দুর্ঘটনাই আলাদা। সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এভিয়েশনের সহযোগী অধ্যাপক চেং-লুং উ বলেছেন, ‘ভয়াবহ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আপনি কোথায় বসলেন তাতে কিছুই আসে-যায় না। লন্ডনের গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নি নিরাপত্তা প্রকৌশলের অধ্যাপক এড গ্যালিয়া, যিনি বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে যুগান্তকারী গবেষণা পরিচালনা করেছেন, তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘এমন কোনো ম্যাজিক আসন নেই, যা আপনাকে মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে পারে। বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে দুর্ঘটনা ঘটার ওপর।

কখনো সামনের দিকে নিরাপদ, কখনো পেছন দিকে। ‘এটা নির্ভর করে আপনি যে দুর্ঘটনার মধ্যে আছেন, তার ওপর। কখনো কখনো এটি সামনের দিকে ভালো হয়, কখনো কখনো পেছনে।’ গ্যালিয়া বা অন্যরা যাই বলুন না কেন, আসন অবশ্যই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায় এরকম মন্তব্য করেছেন অনেকেই। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে এবং বিধ্বস্ত বিমান থেকে কত দ্রুত আপনি বের হতে পারেন তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। বিমান দুর্ঘটনার সময় প্রতিটি সেকেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ।

সবচেয়ে বড় কথা, বিমান যদি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত না হয়, বেশির ভাগ দুর্ঘটনা থেকেই বেশির ভাগ যাত্রী বেঁচে যান। বিমানের আসন, বিমানের গঠন, জরুরি তৎপরতার কারণে ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা একশ ভাগ। আর যাত্রার দৈর্ঘ্য, ফ্ল্যাইটের সংখ্যার তুলনার বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাও খুব কম। বর্তমানে সারা বছর ধরে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন ফ্লাইট চলাচল করে, তাতে বছরে একটি-দুটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমানে বিমান নিরাপত্তা হার গত ২০ বছরের তুলনাতেই বহুগুণ বেড়েছে।

তবে, এখন বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে পাইলটের ছোটখাটো কোনো ত্রুটির কারণে বা আবহাওয়াজনিত কারণে, বিমানের ত্রুটির কারণে ততটা নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল পাখির আঘাতে, আজারবাইজানের বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে পাখিকে দায়ী করা হলেও অনেকে দায়ী করছেন রাশিয়াকে, রাশিয়ার সৈন্যরাই নাকি গুলি করে বিমানটি ভূপাতিত করেছিল।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ