সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে জনঅসন্তোষ বাড়াবেন না
নতুন বাংলা বছর বাংলাদেশিদের জন্য খুব একটা শুভ হয়ে এলো না। পহেলা বৈশাখের আগের দিন বেড়েছিল গ্যাসের দাম, পরের দিন বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম। নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩৩ শতাংশ আর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বাড়ল ১৪ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এমনই ঘোষণা দিলেন। ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সভা শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সাপেক্ষে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে এই মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। বাজারে সরবরাহ ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কিন্তু আমরা জানি বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সহসা আর তা কমে না। ১৩ এপ্রিল যেদিন গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল তখনই অনুমান করা গিয়েছিল অন্যান্য পণ্যের মূল্যও বাড়বে। তবে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়ার আগেই সরকার নিজেই সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিল। স্বাভাবিকভাবেই এখন ভোজ্যতেলনির্ভর খাদ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়বে; কিন্তু বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
সয়াবিন আমাদের প্রধান ভোজ্যতেল। সরকারের হিসেবে, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে ৭ লাখ টন স্থানীয় শর্ষে থেকে আসে। সেই সঙ্গে নতুন করে ৬ লাখ টন রাইসব্র্যান বা কুঁড়ার তেল বাজারে এসেছে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সেনাকল্যাণ সংস্থার তেলও বাজারে আসছে। এত সব হিসাব-নিকাশ সত্ত্বেও আমরা জানি সয়াবিন তেল নিয়ে প্রতি বছরই একটা বিরাট বাণিজ্য হয়। বিশেষ করে রমজান মাসে সয়াবিন নিয়ে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রতি বছরের নিয়মিত ঘটনা।
এবার সরকার অন্যান্য পণ্যমূল্যের মতো সয়াবিন তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিল; কিন্তু রমজান শেষ হতেই এক লাফে লিটারপ্রতি ১৪ টাকা সয়াবিনের দাম বেড়ে যাবে তা বোধহয় কেউ ভাবতে পারেনি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সরকার ও ব্যবসায়ীরা এবার সুদে-আসলে পুরোটাই আদায় করবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, নতুন মূল্য নির্ধারণের মধ্য দিয়ে সরকার প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে পারবে; কিন্তু তার চাপ জনগণ কীভাবে সামলাবে তা নিয়ে কিছু বলেননি।
আশঙ্কা করা যাচ্ছে, শিগগিরই আরও কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল। ডিমের দামও বাড়বে শিগগিরই। পুরো শীত মৌসুমে বাজারে শীতকালীন সবজি ছিল, তাই সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। শীত চলে গেছে, সবজির দামও বাড়তে শুরু করেছে। আর নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লেই সরকারের প্রতি জনগণের অসন্তোষ বাড়বে। সে কথা মাথায় রাখলে সরকারের জন্যই মঙ্গল। আমরা সরকারকে বলতে চাই, পণ্যমূল্য বাড়িয়ে জন-অসন্তোষ বাড়াবেন না। সয়াবিন তেলের মূল্য যত দ্রুত সম্ভব কমাতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যমূল্য যেন আর না বাড়ে সেদিকেও সরকারকে নজর রাখতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে