গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি উসকে দেবেন না
গ্যাসের দাম বাড়বে এমন একটা কানাঘুঁষা কয়েক মাস ধরেই শোনা যাচ্ছিল। গ্যাসের অভাবে গত শীতে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলো নতুন বিনিয়োগের সাহস পায়নি। এ নিয়ে সরকার ও শিল্প-মালিকদের অনেক দেনদরবারও হয়েছে। এবার গ্যাস-সংকটের সমাধান না করে সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিল ৩৩ শতাংশ। গত রোববার (১৩ এপ্রিল) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে সরকার মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
গ্যাসের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই পণ্য ও বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যার চাপ চূড়ান্তভাবে গিয়ে পড়বে ক্রেতার কাঁধে। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে টাকা তুলে নেবেন। বরং গ্যাসের দাম যতটা বেড়েছে, সে তুলনায় পণ্যের দাম বাড়বে অনেক বেশি।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও বাড়ল গ্যাসের দাম। নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।
সম্প্রতি দেশে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কেউ কেউ চুক্তিপত্রেও সই করেছেন; এর মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক? গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেশীয় বিনিয়োগকারীদেরই যেন হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। বিশেষ করে গ্যাসের ওপর বেশির নির্ভরশীল পোশাকশিল্প, নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে অনেক শিল্পকারখানা গ্যাস ব্যবহার করে, স্বাভাবিকভাবেই এই হঠাৎ মাত্রারিক্ত মূল্য বৃদ্ধিতে তারা শুধু নিরুৎসাহিতই হবে না, কার্যত নতুন বিনিয়োগ বন্ধ করে দিবে। পুরোনো কারখানাও বন্ধ করে দেয়া অনেকের জন্য অস্বাভাবিক নয়।
আকস্মিক এই গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে দেশীয় বিনিয়োগকেই যেন নিরুৎসাহিত করল সরকার। পেট্রোবাংলা তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দাম না বাড়ালে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। গ্যাসের দাম বাড়াতে অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান এখন বিকল্প-জ্বালানির কথা ভাববে; কিন্তু এই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে কীরকম প্রভাব পড়বে তার উত্তর দিতে পারেনি বিইআরসি। দাম বাড়ানো হলেও এর সপক্ষে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। দাম বৃদ্ধিতে সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে, তা জানে না কমিশন। সাধারণত কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা হিসাব করে বিইআরসি। এরপর ঘাটতি পূরণে সরকার ঘোষিত ভর্তুকির ভিত্তিতে মূল্য সমন্বয় করা হয়। কিসের ভিত্তিতে দাম বাড়ানো হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব চাহিদা ধরলে দাম অনেক বেশি বাড়াতে হতো। তাই ভোক্তার জন্য সহনীয় রাখতে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকিরও হিসাব করা হয়নি। রাজস্ব চাহিদা যাচাই ছাড়া এভাবে দাম বৃদ্ধি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে করা হয়েছে কি না; জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রেসক্রিপশনে করা হয়নি।
তার মানে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হয়তো আরও আলোচনা ও বিবেচনার অবকাশ ছিল। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখন অনেক জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সম্প্রতি সরকার যে মূল্যস্ফীতি কমিয়েছিল তা আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় তা বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই আমরা চাই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে