অনুমোদনহীন ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বিক্রি
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
আমাদের শরীরে নানা কারণেই পানি প্রয়োজন। পানি শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। সারা দিন আমরা প্রচুর পরিমাণে পানি গ্রহণ করি। তার সবই শুদ্ধ পানি নয়। ফলমূলও কিছুটা পানির অভাব পূরণ কর; কিন্তু সবার পক্ষে সব সময় ফল কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। অনেকেই তাই নানারকম পানীয় পছন্দ করে। পানীয় দ্রব্য সরাসরি দ্রুত পানির অভাব পূরণ করে। এই পানীয় দ্রব্যগুলোর মধ্যে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস খুব জনপ্রিয়। সারা পৃথিবীর মানুষই কম-বেশি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস পান করে। ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলো ক্ষণিকের জন্য দ্রুত শরীরকে সতেজ করে।
এই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলোর মধ্যে নানারকম খনিজ পদার্থ থাকে। যেমন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। শরীরের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবহার হয় এই ‘ইলেক্ট্রোলাইট’। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শরীরে পানি ও অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করা, স্নায়ু, পেশি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষের ক্ষয়পূরণ করা।
কিন্তু এই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলো সঠিক মানসম্পন্ন হতে হবে। তা না হলে উপকার হওয়ার বদলে ক্ষতিই বেশি হবে। খনিজ পদার্থের বদলে যদি শুধু কেমিক্যাল পদার্থ থাকে, তাহলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ জন্য ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলো বাজারজাত করার জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন; কিন্তু গতকাল (১৯ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল, বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বিক্রি হয় অনুমোদন ছাড়া। এই অভিযোগে কোম্পানির মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরই প্রশ্ন উঠেছে, অনুমতি ছাড়াই কীভাবে প্রায় তিন বছর ধরে বাজারে বেচাকেনা চলছে অনুমোদনহীন ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকসগুলো?
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো পণ্য উৎপাদনের লাইসেন্স পাওয়ার পর উৎপাদন শুরু করবে; কিন্তু এসব কোম্পানি কোনো অনুমতি ছাড়াই বাজারজাত করা শুরু করেছে। একই সঙ্গে ওইসব পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারও করছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওই ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়গুলো হলো একমি ও এসএমসি কোম্পানির এসএমসি প্লাস, প্রাণের অ্যাক্টিভ, ব্রুভানা বেভারেজ লিমিটেডের ব্রুভানা, দেশবন্ধু ও আগামী কোম্পানির রিচার্জ এবং আকিজের টারবো।
আরও আতংকের বিষয়, এগুলোর গায়ে যা লেখা আছে, তাতে বোঝা যায় না এটা পানীয় নাকি ওষুধ জাতীয় পণ্য। এসব পানীয় সাধারণত শিশুরাই বেশি পান করে। কায়িক শ্রম যারা করেন, রিকশাচালক, শ্রমিক তারাও হাতের কাছে সহজে পেয়ে যাওয়ার কারণে এসব পানীয় পান করেন। তরুণদের মধ্যেও এসব পানীয় জনপ্রিয়। অনেকে এসব পানীয় পান করেন দ্রুত সতেজতা ফিরে পাবার উদ্দেশ্যে। এর কয়েকটি পণ্য ফার্মেসিতেই বিক্রি হয়। ফলে ভোক্তারা মনে করে এগুলো গুণমান সম্পন্ন; কিন্তু যে পণ্যের অনুমোদনই নেই তার গুণমানই বা বিচার করবে কে! খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআই কিংবা ওষুধ প্রশাসন কারও কাছ থেকেই অনুমোদন না নিয়েই এসব পণ্য বাজারজাত করেছে। যাতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও রয়েছে।’
অনুমোদন ছাড়াই পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত কীভাবে হলো এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকেও। প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এই ইলেক্ট্রোলাইট পণ্যের নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড না থাকার কারণে আমরা অনুমতি নিতে পারিনি। এ জন্য গত জানুয়ারি মাসে আমরা বিএসটিআইর কাছে একটা চিঠি দিয়েছিলাম যে পণ্যটির মান প্রণয়নের জন্য।’ অনুমোদনের বিষয়ে বিএসটিআইর উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বাধ্যতামূলক পণ্যের আওতায় পড়ে না। এ কারণে আমরা অনুমোদন দিতে পারি না।’
পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ও বিএসটিআই উভয়েই এখন পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিচ্ছে; কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে ভোক্তা সাধারণের। ভোক্ত সাধারণের যেমন এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পণ্যটির যথাযথ মান যাচাই করে বাজারজাত করার অনুমোদন দিতে হবে। অন্যথায় পণ্যটি বাজার থেকে উঠিয়ে দিতে হবে। অনুমোদনহীন কোনো পানীয় পান করে ভোক্তা সাধারণ যেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়েন, সে দিকে নজর দেয়ার জন্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ও বিএসটিআইর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে