ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার নয়নের দাফন সম্পন্ন, চালক-হেলপার কারাগারে
সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী মো. সোহানুর জামান নয়নের মৃত্যুর মামলায় ট্রাকচালক বেলাল হোসেন সুমন এবং হেলপার ফরহাদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা নুরুল আমিন মোল্লা শাহবাগ থানায় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর ৯৮ এবং ১০৫ ধারায় মামলাটি করেন। পরে গ্রেপ্তার হওয়া চালক সুমন (৩৬) এবং হেলপার ফরহাদকে (২০) আদালতে হাজির করা হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় ঘটনাস্থলেই তাদেরকে আটকে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমীরুল ইসলাম জানান, তিনটনি ট্রাকটি (পিরোজপুর ড ১১-০২৩৩) জব্দ এবং আদালতের মাধ্যমে চালক-হেলপারকে কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তাদেরকে রিমান্ডে না নেয়ার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এটি আসলে মীমাংসিত মামলা। ‘ঘাতক’ চালক-হেলপার ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
‘আমরা যখন পেয়েছি, তারা স্বাভাবিক ছিলেন বলে তাদের ডোপ টেস্ট করানো হয়নি’- বলেন তিনি।
এসআই আমীরুল বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে সচিবালয়ের সামনের অর্ধেক অংশের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সচিবালয়ের বিপরীতে ওসমানী মিলনায়তনের সামনের বাকি অর্ধেক অংশের রাস্তা তখন খোলা ছিল, যেন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজেই ওই পাশ দিয়ে ঢুকতে পারে। জিরো পয়েন্টের মোড় থেকেই ট্রাকচালক দেখেছিলেন, এখানে ভিড় আছে। তিনি চাইলে কারওয়ানবাজারগামী ট্রাকটি প্রথমেই অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে ওসমানী মিলনায়তনের সামনের রাস্তা বেছে নেন তিনি। সেটিও সমস্যা নয়। আসল সমস্যা হল, তিনি কিন্তু এই জনবদ্ধতার তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
পিরোজপুরে নিবন্ধিত ট্রাকটির মালিকের হদিস এখনো পায়নি পুলিশ। তাকে খুঁজে বের করতে সেখানকার বিআরটিএতে চিঠি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে পানির উৎসে যেতে ফায়ার সার্ভিসের অন্য কর্মীদের সঙ্গে রাস্তা পার হচ্ছিলেন নয়ন। এ সময় পেছন থেকে দ্রুতগতির ট্রাকটি ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে নামাজে জানাজা শেষে রাত নয়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রংপুরের মিঠাপুকুরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে নয়নের মরদেহ। রাত সাড়ে দশটার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এই ফায়ার ফাইটারকে।
কী সাজা হতে পারে চালক-হেলপারের
মামলায় ‘নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালনার ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে চালক সুমন এবং হেলপার ফরহাদের সাজা হবে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’- এর ৯৮ ও ১০৫ ধারা অনুসারে।
৯৮ ধারা মূলত দণ্ড সংক্রান্ত বিধান, যেটিতে বলা আছে, দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের চালক বা কন্ডাক্টর বা হেলপার অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আদালত জরিমানার সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবেন।
অন্যদিকে ১০৫ ধারা মূলত দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ, যেটিতে বলা হয়েছে, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে এই অপরাধ ‘পেনাল কোড, ১৮৬০’ সংশ্লিষ্ট এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে বিচার হবে। তবে ধারা ৩০৪বি তে যাই থাকুক না কেনো ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হলে এবং সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে অপরাধী অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তবে আইনের ১১৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৯৮ এবং ১০৫ ধারা উভয়েই জামিনযোগ্য অপরাধ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে