মাদক পাচার: ১৩০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে সিআইডি
কক্সবাজারের শীর্ষ মাদক পাচারকারীদের অর্জিত ১৩০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পেতে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সিআইডি বলছে, অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি মেনে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এমনকি অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত কোনো সম্পদের খোঁজ পেলেই তা জব্দ করা হবে।
২০১৭ সাল থেকে দায়ের করা ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করছে পুলিশের এই বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিট।
সম্প্রতি সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আইনি প্রক্রিয়ায় তারা ইতোমধ্যে ৯ দশমিক ১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে তিনটি মামলায় দুটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। যেসব সম্পদের মূল্যমান ৮ কোটি ১১ লাখ টাকারও বেশি। এ ছাড়া একাধিক ব্যাংক হিসাব থেকে ১ কোটি ১ লাখ টাকারও বেশি জব্দ করা হয়েছে।
মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ আয়ের অনুসন্ধানে নেমে এর সঙ্গে টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আব্দুর শুক্কুরের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
অতিরিক্ত আইজিপি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তদন্তের কোনো পর্যায়ে সাবেক এমপির (বদি) সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারীর উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকাঙ্ক্ষায় কক্সবাজারের যে ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছিল, সাবেক এমপি বদির দুই ভাই তাদের অন্যতম। ২০২২ সালে একটি মাদক মামলায় আমিনুর ও শুক্কুরকেও তাদের অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বিশেষায়িত তদন্ত ইউনিটের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয়সহ সম্পদের তথ্য মিলেছে। এবং একই সঙ্গে জমা দেয়া হয়েছে প্রায় ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
তদন্ত দল সম্পদের পরিমাণ ও জমাকৃত অর্থ ৪৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নিশ্চিত করেছে বলে জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র এসপি আজাদ রহমান। তিনি জানান, এর মধ্যে ৯ কোটি ১২ লাখ টাকার সম্পদ ও আমানত জব্দ করা হয়েছে। আর ৩৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ ও আমানত জব্দের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে এসব সম্পদের মধ্যে বদির ভাইদের নামে চিহ্নিত কোনো সম্পদ অন্তর্ভুক্ত নেই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসপি বাছির উদ্দিন জানান, সম্পদ ও আমানতের যে অংশ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে, তা থেকে মাত্র ৪৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকার সম্পদ ও আমানত শনাক্ত করা গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাকি ১৩২ কোটি টাকার সম্ভাব্য সম্পদের সন্ধানে আছি। তবে কাজটা এত সহজ হবে না। আত্মীয়-স্বজন ও অংশীদারদের নাম দিয়ে সম্পদ অর্জন প্রক্রিয়া বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এ পর্যন্ত মামলার ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের অনেকেই বর্তমানে জামিনে রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মাদক পাচার থেকে উপার্জন করেই যে এসব সম্পদ অর্জন করা হয়েছে তা নিশ্চিত করা; কিন্তু মামলার অগ্রগতি আমাদের আশাবাদী করে তুলছে যে অবৈধ বাণিজ্য, পাচার করা অর্থের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের প্রতিটি কণা আমরা খুঁজে বের করতে পারছি।’
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব রাঘববোয়ালকে যথাসময়ে গ্রেপ্তার করা হবে। যাদের কাছে অবৈধ সম্পদ ও মাদক চোরাচালান থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাওয়া যাবে, তাদের অবৈধ আয় সরকার আইনি উপায়ে বাজেয়াপ্ত করবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে