Views Bangladesh Logo

৩৫ বছর পুরোনো বাসে চলাচল, ঝুঁকি-দুর্ভোগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

৫ বছর পুরোনো, অনুপযুক্ত এবং নিষিদ্ধ বাসে চলাচল করছেন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। ফলে নিরাপত্তার হুমকি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে।

এসব যানবাহন কোনো ধরনের বৈধ ফিটনেস সনদ কিংবা নির্গমন নিয়ন্ত্রণ মানদণ্ড পূরণ না করেই রাস্তায় চলছে। এতে হচ্ছে পরিবেশ দূষণও।

এতোসব সমস্যার পেছনে পরিচালনা ও মেরামত ব্যয়ে বাজেট ও আর্থিক সংকটকেই দুষছেন ঢাবি প্রশাসন। তবে পরিবহন ব্যবস্থাপনার সংকট, বরাদ্দে অনিয়ম ও বৈষম্য এবং আইন ও আন্তর্জাতিক মানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে পরিবহন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান মোল্লা ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, এই গাড়িগুলোর ফিটনেস নবায়ন প্রক্রিয়া প্রায় অসম্ভব। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ)।

প্রধান পরিবহন সহকারী মো. ফারুক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহরে ২৩টি বাস থাকলেও ১৪টি সচল এবং এর মধ্যে ১৩টি নিয়মিত রুটে চলছে। বাকি নয়টি বাস পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে আছে এবং শুধুমাত্র একটি এসি বাস পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।

ঢাবি সূত্র বলছে, এই দূরাবস্থার পেছনে রয়েছে বাজেট সংকট, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রয়েছে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও। প্রতিমাসে শুধুমাত্র মৌলিক মেরামতে খরচ হয় সাত থেকে আট লাখ টাকা। উন্নত মেরামতে আলাদা টেন্ডার লাগে। ফলে চলতি অর্থবছরে মোট মেরামতের খরচ দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখ টাকা, যেখানে বরাদ্দ ছিল ৫০ লাখ টাকা। যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি বাবদ মাসিক ব্যয় দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, যার সংস্থানও অপ্রতুল।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে রয়েছে ১৯টি যান, যার তিনটি এসি মাইক্রোবাস শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত। আরও আটটি মাইক্রোবাসের ছয়টি সচল। চারটি জিপের একটি উপাচার্যের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং বাকি তিনটি উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয়।

পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি মাঝে মাঝে বিকল এবং পাঁচটি পিকআপের দুটি অকেজো থাকলেও এগুলোর কার্যকর ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। সরকারের উপহার পাওয়া চারটি গাড়ি কর্মকর্তাদের ব্যবহারে নির্ধারিত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় প্রশাসনিক শ্রেণিবৈষম্যকে স্পষ্ট করে।

বিআরটিএ'র নিয়ম অনুসারে, চালকদের সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ন্যূনতম এসএসসি পাস থাকতে হয়। কিন্তু পরিবহন অফিসে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য বড় প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনো কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে এ নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে প্রায়শই অভিযোগ উঠছে।

১৯৮৩ সালের মোটর যানবাহন অধ্যাদেশের ৪৮ ধারা অনুসারে, যানবাহনের জন্য বৈধ ফিটনেস সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। ৩৫ বছরের পুরোনো যানবাহনের পক্ষে এই শর্ত পূরণ করা কার্যত অসম্ভব, যদি না কোনো ধরনের কারসাজি হয়। বিআরটিএ'র নির্দেশনায়ও ২০–২৫ বছরের বেশি সময় গণপরিবহন চালানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব যানবাহন ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে অনুমোদিত নির্গমণ সীমা লঙ্ঘন করছে। আন্তর্জাতিকভাবে, এসব বাস জাতিসংঘের সড়ক নিরাপত্তা লক্ষ্যমাত্রা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা এবং ইউরো নির্গমণ মান পূরণেও ব্যর্থ। যানবাহনগুলো তাই দেশের আইনই নয়, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডও ভঙ্গ করছে।

সূত্রের অভিযোগ, পুরোনো বাসগুলোর পাঁচ-ছয়টি নিলামের জন্য চিহ্নিত হলেও এখনও সিরিয়াল নম্বর ৪১৬৬ যুক্ত একটি বাস সক্রিয়ভাবে চলছে। অথচ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষও এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ