কুমিল্লায় জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা
কুমিল্লায় জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। কুমিল্লা জেলায় ৭৪৮টি মণ্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও পূজামণ্ডপগুলোয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা উচ্চ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। মণ্ডপে আসা ভক্তদের মাঝে রয়েছে স্বস্তি। মণ্ডপগুলোর বর্ণিল সাজ চোখে পাড়ার মতো। পূজায় বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিযোগিতা দিয়ে সাজ সজ্জার আয়োজন করা হয়েছে।
কুমিল্লা নগরীর ঐতিহ্যবাহী রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ী, ঠাকুরপাড়া, নানুয়াদীঘির পাড়া, জগন্নাথ মন্দির, হাউজিং এস্টেটসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শুক্রবার অষ্টমীর দিন ঘুরে দেখা গেছে, উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য নিয়ে পূজা অর্চনার কাজ করছেন ভক্তরা। রয়েছে ঢাক-ঢোলের তাল নাচ গানের মহোৎসব। আর এ পূজা পালনে মন্দিরগুলোতে চলছে ধূপ, পঞ্চপ্রদীপ, উলুধ্বনি ঢাকের সঙ্গে শঙ্খনাদ।
শুধু কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকায় রয়েছে ৯৬টি পূজামণ্ডপ। এর মধ্যে ৪টি ঘট পূজামণ্ডপ রয়েছে। আর গোটা জেলার ৭৪৮টি মণ্ডপের মধ্যে ৩৪টি মণ্ডপে ‘ঘট’ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা ৯৩টি কম। গত বছর ছিল ৮৮১টি মণ্ডপ আর এ বছর ৭৪৮টি মণ্ডপ। বন্যাসহ নানা কারণে এবার মণ্ডপ কম বলে জানা গেছে।
ঘট পূজা সম্পর্কে কুমিল্লা মহানগর পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, পূজা সাধারণত ভগবানের মূর্তি তৈরি করে বা ভগবানের স্বরূপ তৈরি করে করা হয়। আর ঘটপূজা হলো মূর্তিবিহীন পূজা। এখানে ভগমানকে নিরাকার হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ ভগবানকে স্বরূপে এবং নিরাকার রূপে এ দুই রূপেই পূজা করা যায়। ঘট পূজা নিরাকার রূপের পূজা।
তবে কুমিল্লায় এবার কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনে এ পূজা হলেও এবার হচ্ছে না। নানা সমস্য এবং ভিড় বা অতিরিক্ত জনসমাগত সামলাতে এ সিদ্ধান নেয়া হয় বলে জানা গেছে। কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক এ কথা জানান।
বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ৬ জেলায় পূজামণ্ডপের সংখ্যা ১৯০৬টি। সবকটি পূজামণ্ডপের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আনসার বাহিনী। কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর এ ৬ জেলায় আনসারের মোট ১২ হাজার ৪০১ জন সদস্য পূজা মণ্ডপের দায়িত্বে আছেন।
বাংলাদেশ আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুমিল্লা রেঞ্জ পরিচালক ও রেঞ্জ কমান্ডার আশিষ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, কুমিল্লা থেকে ৬টি জেলায় আনসার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ৬ জেলার ১৯০৬টি পূজা মণ্ডপে ১২ হাজার ৪০১ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন। তার ওপর রয়েছে সেনাবাহিনীর নজরদারি, র্যাব, পুলিশের তৎপরতা। তিনি বলেন, পূজা চলাকালে বিসর্জন পর্যন্ত আমাদের রেঞ্জের প্রতিনিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার পাশাপাশি ৪৩টি টিমে ২১৫ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য প্রতি জেলায় মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সাদা পোশাকে টহল পরিচালনা করবে। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো প্রকার আপস করা হয়নি। আশা করি, এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারবেন ভক্তরা।
মহাষষ্ঠীতে মণিষাসুর মর্দিনী দেবীর আবাহনের মধ্যে দিয়ে বুধবার শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা। বৃহস্পতিবার ছিল সপ্তমী। আজ শুক্রবার অষ্টমী। আগামী ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে দুর্গা দেবীর মৃর্তিকে বির্সজন দেয়া হবে।
কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি নির্মল চন্দ্র পাল বলেন, সনাতন ধমাবলম্বীদের জন্য দুর্গাপূজা সবচেয়ে বড় উৎসব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে সহায়তা করছে, তাতে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু পরিবেশে পূজার উৎসব সমাপ্ত হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে