রাজপথে আন্দোলন
জনভোগান্তি দূর করুন
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যাস হয়ে গেছে যে কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করা। গত আড়াই মাসে এরকম বহু দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকার রাজপথ অবরুদ্ধ হতে দেখা গেছে। অবশ্যই সেই সব আন্দোলনে যৌক্তিকতা আছে, আমরাও তাদের সঙ্গে সহানুভূতি ও একাত্মতা প্রকাশ করি অনেক ক্ষেত্রে; কিন্তু আন্দোলনকারীদের এটাও মনে রাখতে হবে ঢাকা এমনিতেই অত্যন্ত জ্যামের শহর, সেখানে দিনের পর দিন যদি রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয় তাহলে জনজীবন কতটা ভোগান্তিতে পড়ে!
গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাব মোড় চার ঘণ্টার বেশি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। এর আগে গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় প্রায় সাত ঘণ্টা অবরোধ করে রেখেছিলেন বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মীরা। এরকম অবরোধ লেগেই আছে ঢাকা শহরজুড়ে। গতকালও ঢাকার রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছিল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে।
সমাজ-রাষ্ট্র থাকলে সেখানে নানা শ্রেণি-গোষ্ঠী থাকবে, তাদের সবারই আলাদা আলাদা দাবি-দাওয়া থাকবে, দাবি আদায়ের জন্য তাদেরও রাজপথেও নামতে হবে সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু এই যানজটের ছোট্ট শহরে যদি দিনের পর দিন এভাবে অবরোধ চলতে থাকে, তাহলে জনজীবনের কী অবস্থা হয় তাও সবাইকেই ভাবতে হবে।
ঢাকা শুধু দাবি আদায়ের জায়গা তো না, এখানে দেশের সবচেয়ে ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, ভালো হাসপাতালগুলো। প্রতিদিন ঢাকার বাইরে থেকেও হাজার হাজার মানুষ আসেন চিকিৎসা নিতে। দেশের বাইরে যেতে হলেও অধিকাংশ মানুষকে ঢাকা হয়েই যেতে হয়। আরও নানা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আছে, আইন-আদালত আছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে- এক দিনের একপক্ষের অবরোধেই যে ঢাকার অর্ধেকটা স্থবির হয়ে থাকে তা কি আন্দোলনকারীরা জানেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে চান না সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ জন্য আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন দফা দাবি মেনে না নেয়া হলে আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
দাবি তিনটি হলো, ১. সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে; ২. সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবে; ৩. সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে, যাতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন। জনভোগান্তি দূর করুন। শিক্ষার্থীদেরও বলব ধৈর্য ধরতে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের মধ্যে সমাধান নাও হতে পারে।
এটি শিক্ষা-সংক্রান্ত বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের ব্যাপার। দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষার্থীদের একত্রিত হয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে; কিন্তু সমস্যার সমাধানের আগ পর্যন্ত যেন জনদুর্ভোগ না হয়, তা সব পক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। এটা অন্যসব আন্দোলনকারীদেরও মনে রাখতে হবে। যে কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে যেন ঢাকার রাস্তা অবরোধ না হয়। কারণ ঢাকা আপনারও শহর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে