নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সুখবর
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে ১৮ ক্ষেত্রে প্রায় ১৫০টি সুপারিশে সুখবর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ সহজ করে দিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোট এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
এর পাশাপাশি নিম্নকক্ষের প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কোনো সুপারিশ করেনি এই কমিশন, তবে সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্যদের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আবার নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র দাখিলে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেয়ার বিধান করার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদন এই সুপারিশগুলো করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
কমিশনের সুপারিশপত্রের ২.১ অনুচ্ছেদে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা এবং এ ক্ষেত্রে একক কিংবা যৌথ হলফনামার মাধ্যমে ভোটারদের সম্মতি জ্ঞাপনের বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই একই অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এখতিয়ারভুক্ত অপরাধে, গুরুতর অপরাধ যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, গুরুতর দুর্নীতি, ঋণ-বিল খেলাপিদের, অর্থপাচারের অভিযোগে দোষীদের সংশ্লিষ্ট আদালত দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেছে এই কমিশন। এছাড়াও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(২)(ঘ)-এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেয়ার কিংবা তথ্য গোপনের কারণে আদালত কর্তৃক কোনো নির্বাচিত ব্যক্তির নির্বাচন বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করারও সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যেমন পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য করার সুপারিশ করা হয়েছে তেমনিভাবে বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদে আসীন ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ওই পদ থেকে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ সংক্রান্ত আরপিওর ধারা বাতিল করার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
এই কমিশন প্রার্থিতায় বৈচিত্র্যতা আনতে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ মনোনয়নের সুযোগ তৈরির বিধান করার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
এদিকে মনোনয়নপত্র বিষয়ক অনুচ্ছেদ ২.২-এ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইনি হেফাজতে থাকা ব্যতীত সব প্রার্থীর সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরির কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার কথা উল্লেখ করে সংস্কার কমিশন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেয়ার বিধান করার কথাও বলেছে।
নির্বাচন ব্যবস্থাবিষয়ক ২.৪ অনুচ্ছেদে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করার সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
যোগাযোগ করা হলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, আগের কমিশন দায়বদ্ধ না থাকার কারণে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। এমনটি যেন ভবিষ্যতে না হয় এবং ২৪-এর আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের রক্ত যাতে বৃথা না যায়, তাই ২৪-এর স্পিরিটকে ধারণ করে এক দেশের সবাইকে একীভূত করে ১৮টি ক্ষেত্রে ১৫০টির মতো সুপারিশ করা হয়েছে যেখানে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধও করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
এছাড়াও কিছু কিছু যৌক্তিক ক্ষেত্রে যেমন যোগ্যতা শিথিলের সুপারিশ করা হয়েছে তেমনি অযোগ্য ব্যক্তিরাও যেন আসতে না পারে তার ব্যবস্থা করারও সুপারিশ করেছি। এছাড়াও ভবিষ্যতে স্বৈরাচার ব্যবস্থা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া বা দুইবার প্রধানমন্ত্রী হলে আর যেন রাষ্ট্রপতি না হতে পারে তার সুপারিশই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এখানে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী বিষয়ক অনুচ্ছেদ-৩ এ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই টার্মে সীমিত করার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য করারও সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবেন দল নিরপেক্ষ। একই ব্যক্তি একইসঙ্গে যাতে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হতে না পারেন তার বিধান করতেও বলা হয়েছে এই সুপারিশপত্রে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে