খেলাপি ঋণ আদায়ে চাই কার্যকর পদক্ষেপ
বর্তমানে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকটের মধ্যেই দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কর ফাঁকি, মূল্যস্ফীতি ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার। আর এই খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার দুটি নেপথ্য কারণ হলো দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া। অন্যদিকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় ডলারসংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বারবার সতর্ক করে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে দেশে ডলারসংকটের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের আয় কমে গেছে। কিন্তু মানুষ কোনোভাবেই তাদের ব্যয় কমাতে পারছে না। ফলে উৎপাদিত পণ্য সেভাবে বিক্রিও হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীদের নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে দেখা দিয়েছে অনেক ব্যবধান।
দেশের বিশেষ একশ্রেণির মানুষ কর ফাঁকি দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে দর কম দেখিয়ে পণ্য আমদানি করেন। এর মাধ্যমে তারা একদিকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন, অন্যদিকে অর্থ পাচার করছেন। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। কিন্তু এমন হুঁশিয়ারির কতটুকু কার্যকর হয়, তা এখন দেখার বিষয়।
দেশ থেকে নানাভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচার যে বাড়ছে, তার বড় প্রতিফলন রয়েছে বৈধপথে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার তথ্যে। সরকারি সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগই বলছে, এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ বা দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে। তাই রিজার্ভের দ্রুত পতন হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, দেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা দেশের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত হিসাব করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতিযোগী এবং তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হারই সবচেয়ে বেশি। এই খেলাপি ঋণই ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা। তবু কেন সরকার খেলাপি ঋণকারী ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নমনীয় নীতি অনুসরণ করছে তা বোধগম্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা ঋণখেলাপি তারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে এই খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মনে রাখতে হবে, সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে খেলাপি ঋণের এই বিপুল অর্থ আর কখনোই ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে না।
অর্থনীতির প্রতিটি উদ্দীপক একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যে কারণে দেশে খেলাপি ঋণের অর্থ পাচার বেড়েছে। সে কারণে বৈধপথে প্রবাসী আয়ও কমছে। সেই সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। যার জন্য রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। তাই খেলাপি ঋণ, দুর্নীতি ও হুন্ডিব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা আছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে