জাবিতে ধর্ষনের বিরুদ্ধে কুশপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভ সমাবেশ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ধর্ষক- নিপীড়কের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। ধর্ষণ বিরোধী পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অমর একুশ' এর পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে হলের পাশে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। এরই প্রেক্ষিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্তে না এলে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া বলেন, 'একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে অন্যদিকে ক্যাম্পাসে প্রহসন চলছে। প্রশাসন এখনো সাবেক শিক্ষার্থীদের বের করতে পারেনি। প্রশাসন যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে যেন ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। প্রশাসন বলেছিল পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে সকল অছাত্রদের বের করে দিবে কিন্তু তারা বের করতে পারেনি। প্রশাসন গুটি কয়েক অছাত্রদের বের করে দিয়ে দেখাচ্ছে যে তারা অছাত্রকে বের করে দিচ্ছে। সামনে ভর্তি পরীক্ষা আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে ক্যাম্পাস প্রবেশ করুক। আমাদের যে আন্দোলন তা চলবে।'
সমাবেশে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, 'যারা মোস্তাফিজকে ধর্ষক হিসেবে তৈরিতে সাহায্য করেছে তাদের সিন্ডিকেট শনাক্ত করুক। শুধু মোস্তাফিজের বিচারের মাধ্যমে এ ঘটনা শেষ হবে না৷ প্রক্টর, প্রভোস্টসহ যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। মাদকের বাণিজ্য হচ্ছে। আপনারা তাদের শনাক্ত করুন। নয়তো আমরা ভাববো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত৷ '
ভর্তি পরীক্ষা নিতে চাইলে এবং সবার জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে চাইলে প্রক্টর ও প্রভোস্টের পদত্যাগ অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমরা ইতোপূর্বে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে প্রক্টর ও প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেছি। কিন্তু প্রশাসন সে দাবি মানেনি। সারাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ঢাবি, চবিতে কত ভালোভাবে নিপীড়কদের বিচার হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও নিরাপদ পরিবেশ নেই।'
সিন্ডিকেটে দৃশ্যমান অগগ্রতি দেখা না গেলে ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে যার সম্পূর্ণ দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে তার কোনটাই পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষক সমিতির সভায়ও এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষকেরই মতের ভিন্নতা ছিল না।'
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আন্দোলনরত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে