গ্যাসের সংকট দূর করুন
গত এক মাস ধরেই সারা দেশে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সংকটে বন্ধ রয়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। অনেক অঞ্চলে বাসা-বাড়িতেও গ্যাস সংকট চলছে। ফলে রান্না-বান্নারও সমস্যা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে খবরে জানা যায়, সরবরাহ না বাড়ায় দেশে গ্যাসের সংকট বেড়েই চলছে। দিনে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় ১৩৫ কোটি ঘনফুট। গ্যাসস্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিল্প। চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম গ্যাস পাচ্ছে শিল্পকারখানা।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চট্টগ্রাম, নরসিংদীসহ দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে এই সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে কারখানার উৎপাদন। অনেক কারখানা হুমকিতে, আবার কোনোটি বন্ধের পথে। বাধ্য হয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন মালিকরা। উৎপাদন কম হওয়ায় কমছে পণ্য রপ্তানি, বিদেশ থেকে বাড়ছে কাঁচামাল আমদানি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ছে। গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কারখানা চালু রাখার চেয়ে বন্ধ রাখলেই লাভ। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ হচ্ছে গাড়ির সারি। তবুও মিলছে না চাহিদার অনুপাতে গ্যাস। সরকার বলছে, গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির নানা পদক্ষেপ এবং শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, শিগগিরই গ্যাস সংকট দূর হবে না। বিগত দিনগুলোতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানিতেই সরকারের ঝোঁক বেশি ছিল। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে চরম অবহেলা করা হয়েছে। এতে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে চাহিদা দিন দিন বেড়েছে। ফলে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশের শিল্প-কারখানাগুলো বেশির ভাগই গ্যাসীয় জ্বালানি নির্ভর। গ্যাস ছাড়া আমাদের শহরাঞ্চলে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নার জন্য আর কোনো জ্বালানি এখন নেই বললেই চলে। তা ছাড়া গ্যাসের ওপর এখন অনেক যানবাহনও নির্ভরশীল। গ্যাস থেকে বিদ্যুৎও উৎপাদন করা হয়। ফলে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রচুর; কিন্তু তুলনায় আমাদের দেশে গ্যাস উৎপাদন কম। এর প্রয়োজন অনেকটাই মেটে গ্রাস আমদানি করে; কিন্তু তাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। ফলে গ্যাসের অভাবে দেশের অর্থনীতি এক মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
শিল্পকারখানার অবস্থা শোচনীয়। এমনিতেই গ্যাসের চাপ থাকে না। এখন তা আরও কমে গেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্প উৎপাদন গভীর সংকটে পড়বে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শিল্পকারখানা বন্ধ হলে কিংবা বেতন দিতে না পারলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবেন।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দিনে প্রায় ৪২০ কোটি ঘনফুট। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা সরকার কীভাবে পূরণ করবে তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও এখনো জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বড় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে; কিন্তু তা না করে এলএনজি আনার দিকে ঝোঁকটা বেশি দেখা যায়। কেন গ্যাস আমদানির দিকে বেশি ঝোঁক- এ কারণটাও ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
তাতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাভবান হয় নিঃসন্দেহে; কিন্তু দেশের জনগণের তাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় তা ভেবে দেখতে হবে। যদিও সরকার এরই মধ্যে শিল্পে গ্যাসের সংকট সমাধানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পাশাপাশি গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে; কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না। তাই আমাদের প্রত্যাশা, গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়ে গ্যাস সংকট দূরে সরকার জনগণের দুর্ভোগ কমাবে এবং শিল্পকারখানা সচল করার ব্যবস্থা করবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে