ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করুন
ঈদ উপলক্ষে দলে দলে মানুষ শহরের কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ছুটে যায় পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করা জন্য। তাদের সেই আনন্দ অনেকখানিই মাটি হয়ে যায় ঈদযাত্রার ধকলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাসমালিকদের গলাকাটা ভাড়া। গত ৭ এপ্রিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও ঘরমুখো মানুষের পকেট কাটছেন কতিপয় বাস মালিক। দূরত্ব ও বাসভেদে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়াও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে। কোনো যাত্রী পথে নেমে গেলেও বাস কোম্পানিগুলো ঠিকই সর্বশেষ গন্তব্যের ভাড়া নিচ্ছে। অসহায় যাত্রীরা এসব অনিয়ম মেনে নিতে বাধ্যও হচ্ছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সত্যতা পেয়েছে। ঈদে এমনিতেই মানুষের খরচ বেড়ে যায়। নতুন জামাকাপড় কিনতে হয়। প্রিয়জনকে উপহার দিতে হয়। ঈদের বাজার-সদাই কিনতেও একটা বড় খরচ। তার সাথে যদি যুক্ত হয় অতিরিক্ত ভাড়া, তাহলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠারই কথা। একদল অসাধু সুবিধাবাদী বাসমালিকের দৌরাত্ম্যে অনেকেরই ঈদযাত্রা অভিশাপের মতো। শেষ মুহূর্তে যাত্রীচাপ থাকে বিধায় বাসমালিকরা এ-সুযোগটা নেন। যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবহন মালিক সংশ্লিষ্টদের উত্তর, ফেরার সময় খালি ফিরতে হয়। তা ছাড়া যানজটের কারণেও নির্ধারিত সময়ে বাস পৌঁছাতে পারে না। এভাবেই তাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে হয়।
অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ মাঝপথে নেমে গেলেও তারা বাসটির শেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করেন এবং মাঝপথ থেকেও তারা যাত্রী উঠান। তা ছাড়া বাসগুলোও তারা বোঝাই করছেন যতটা পারছেন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অসহনীয় কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। যাত্রীদের আরাম তো দূরের কথা, কোনোরকমেরই সেবামান নেই। না পেরেই এসব বাসে যাওয়া। অনেকে ফিটনেসবিহীন গাড়িও পথে নামিয়েছেন।
অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকটি পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছে। নির্ধারিত রুটের বাইরে অতিরিক্ত দূরত্বে চলার কারণে কয়েকটি বাসের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে।
তাও নানা অসাধু উপায়ে অনিয়ম চলছেই। ফেরার পথেও হয়তো যাত্রীদের এমন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে। বাংলাদেশের পরিবহন বিভাগ উন্নত হলেও এ ধরনের কিছু অনিয়ম এখনো রয়েই গেছে। এর সঙ্গে মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজট তো আছেই।
এবারের ঈদের ছুটির আগেই ৫, ৬, ৭ তারিখ তিনদিন সরকারি ছুটি পাওয়া গেছে। অনেকে তাই পরিবারের লোকজনদের আগেভাগে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের বেশ চাপ দেখা যায়। ঈদের আগে ঈদের ছুটি পাওয়া যাবে মাত্র একদিন, সেদিনও হয়তো খুব চাপ পড়বে যাত্রীদের। ঈদের পর অবশ্য অনেক দিন ছুটি আসে। তাতে হয়তো ঘরেফেরা মানুষ একটু স্বস্তিত্বেই আপন কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন। তবে, ঈদের আগের দিন অনিয়ম ও ‘গলাকাটা’ কতদূর বৃদ্ধি পায় তা-ই এখন দেখার বিষয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীসহ পরিবহন বিভাগের সবাইকে এ বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে। ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমিয়ে মানুষের ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে