শ্রমিক অসন্তোষ দূর করুন
সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষ কিছুতেই কমছে না। বরং তা ক্রমশ বাড়ছে। ঢাকা থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য যা খুবই আশঙ্কাজনক।
রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ডলার আয়। এর প্রভাব পড়বে আমদানিতেও। গত বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর সংবদামাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, শ্রম অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের বিক্ষোভে আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১৮৩ কারখানা বন্ধ ছিল। গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় বিগবস করপোরেশন নামে একটি কারখানার গুদামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে দেশের ৬টি জেলায়।
হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত ৩১ আগস্ট থেকে গাজীপুর ও সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া কারখানায় নিয়োগে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিতের দাবিতেও বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। মাঝে চার দিন পরিস্থিতি ভালো থাকলেও গত মঙ্গলবার গাজীপুরে আবার শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। গত সোমবার তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা আশুলিয়ার শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরা কেন শান্ত হচ্ছেন হচ্ছেন না? তারা কি কোনো আশ্বাসে বিশ্বাস করছেন না? না কি এর পেছনে কোনো সুদূর প্রসারি রাজনৈতিক লক্ষ্য রয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এখন যে-কোনো বিষয় নিয়েই আন্দোলন-সংগ্রাম দেখা দিচ্ছে। এর কারণ একদিকে যেমন অনেকে অনেক দিকে বঞ্চিত ছিল, এখন সেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আসছে, অনেকে আবার নানা সুযোগও নিতে চাচ্ছে। বর্তমান সরকারও এসব নিয়ে অস্বস্তিত্বে আছে। জনগণও একরকম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। চারদিকের আলাপ-আলোচনা শুনে বোঝা যাচ্ছে অনেকেই বুঝতে পারছে না দেশে ঠিক কী হচ্ছে। গ্যাস সংকটে লোডশেডিং বাড়ছে, তার সঙ্গে এখন শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধ। দ্রব্যমূলও যে খুব একটা কমেছে বলা যাবে না। শ্রমিক অসন্তোষের সঙ্গে যদি জন-অসন্তোষও তৈরি হয় তাহলে সরকারের জন্য বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যাবে।
আমরা চাই, দ্রুত শ্রমিক অসন্তোষ দূর করে কারখানাগুলো চালু করুন। রাস্তা থেকে শ্রমিকদের কারখানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য এটা খুব দরকার। কারখানা মালিকদের শ্রমকদের সুবিধা-অসুবিধার কথা আরো ভালো করে ভাবতে হবে। আমরা জানি গত বিশ বছরে কারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শ্রমিকদের শোষণ করেই এই কতিপয় ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। ভিয়েতনামের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা জীবনমানে অনেক পিছিয়ে আছেন। বৈষম্য দূর করার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনমান বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার কথা সরকারকে শুনতে হবে।
পাশাপাশি শ্রমিকদেরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। বর্তমান সরকার মাত্র ক্ষমতায় এসেছে, সরকারকে আরেকটু সময় দিতে হবে। এখনই পরিস্থিতি অস্থির করে তুললে এই সুযোগের তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে, এবং আমাদের নিজেদেরই তাতে ক্ষতি হবে। সব পক্ষ বিবেচনা করে সরকার, শ্রমিক এবং কারখানার মালিক পক্ষ তিন পক্ষকেই সুবিবেচনার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে