Views Bangladesh Logo

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি বন্ধ করুন

ন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই জাতিসংঘ সনদের মূল লক্ষ্য। জাতিসংঘের সনদ মূলত একটি সংবিধান, আর সংবিধান মানেই এক প্রকার আইন। এই সনদের ২ ধারা অনুযায়ী সব সদস্যরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও সমতা রক্ষাই জাতিসংঘের ভিত্তি; কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য (ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন) দেশগুলোই বারবার এই আইনের লঙ্ঘন করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে আছে সবসময়ই। চীন, রাশিয়া কম যায়নি। সম্প্রতি ভারতও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেই তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এ যেন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ গ্রাম্যনীতি। তাহলে আর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অর্থ কী? যে রক্তপাত ও মানবিক বিপর্যয়ের ওপর দাঁড়িয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা কি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ভুলে গেছে?

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প এমনই এক গলাবাজি করলেন। গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা দীর্ঘ মেয়াদে গাজার দখল নেবে। বিশালাকার আবাসন প্রকল্পের পাশাপাশি অবকাশ ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজা উপত্যকার দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন মালিকানার প্রত্যাশা করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা দখলে নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করলে ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও তার পশ্চিমা সমালোচকরা এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানান। তাদের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে জাতিগত নির্মূলের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিন, মিসর, সৌদি আরব, তুরস্কসহ বহু দেশ ট্রাম্পের পরিকল্পনা নাকচ করছে দিয়েছে। টানা ১৫ মাসের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন করছেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও চীন ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্ট্যামার বলেছেন, গাজাবাসীদের পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া উচিত। রাশিয়া বলেছে, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে উচ্ছেদ করা যাবে না।

ফিলিস্তিনি নাগরিকরা বলছেন, ট্রাম্প স্বদেশের জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস জানেন না, তাই তিনি এমন কথা বলতে পারছেন। ট্রাম্পের কথাকে পাগলের প্রলাপ বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ বলছেন, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড দখলে নেয়ার পরিকল্পনা হালে পানি না পাওয়ায় এবার ট্রাম্পের নজর গাজা উপত্যকার দিকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফিলিস্তিন যদিও জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র নয়, ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে আছে, তাও ট্রাম্পের মন্তব্য স্বাধীনতাকামী এক রাষ্ট্রের ওপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আমরাও বলতে চাই, যতদিন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়া না হবে ততদিন মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির সমস্যা থাকবে। জাতিসংঘ যদি কঠোরভাবে এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে বিশ্বশান্তি বিনষ্ট হবেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ