Views Bangladesh Logo

কল্পনার সব রং যে প্রজাপতিতে আছে, তা আজ বিপন্ন

‘প্রজাপতি, প্রজাপতি- কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এ গান গেয়ে শিশুরা এক সময় মনের আনন্দে নৃত্য করত। এ গান হয়তো এখনো অনেকের পরিচিত; কিন্তু প্রজাপতি সামনা-সামনি চোখের সামনে দেখেছে এমন শিশু এখন কমই পাওয়া যাবে। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে। গাছ নেই, ফুলের বাগান নেই- প্রজাপতি থাকবে কোত্থেকে? এক সময় আমাদের ঘরের ভেতর ঢুকে যেত প্রজাপতি, কোথাও বসে থাকলে প্রজাপতি উড়ে এসে বসত আমাদের হাতের ওপর, মাথার ওপর, অনেকে ভাবত কারও গায়ে প্রজাপতি বসা সৌভাগ্যের লক্ষ্মণ। এমনই আদরণীয় ছিল এই পতঙ্গটি আমাদের কাছে; কিন্তু আজ প্রজাপতি হারিয়ে যেতে বসেছে।

কেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রজাপতি? এর জন্য গবেষণারও প্রয়োজন নেই, আমাদের সাধারণ-স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিতেই বুঝতে পারি বৃক্ষহীন, পুষ্পহীনতাই এর মূল কারণ। প্রজাপতি মূলত ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়। মৌমাছির মতো হলেও এরা মৌমাছি নয়। মধু সংগ্রহের চেয়ে এদের বেশি কাজ পরাগায়নে। উদ্ভিদকুলের জন্য প্রজাপতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রজাপতি হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক উদ্ভিদও। আবার বৃক্ষলতা কমে যাওয়ার কারণেও প্রজাপতি হারিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত প্রকৃতিতে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, তার দুর্ভোগে পড়ছে সমস্ত প্রজাতিকুলেই।

প্রজাপতি হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ বৃক্ষনিধন। গাছপালার সংখ্যা কমে যাওয়া। গ্রামেও এখন ফুলের বাগান তেমন চোখে পড়ে না। অথচ এক সময় বাড়িতে বাড়িতে ফুলের বাগান ছিল। ফুলচাষ এখন পুরোটাই কৃষি-প্রকল্পনির্ভর। আর এসব ফুলচাষে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক সার। এখন এমন কোনো কৃষিক্ষেত্র নেই, যেখানে ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। এই বিষের কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রজাপতিসহ অনেক পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ। অদূর ভবিষ্যেতে এটা প্রকৃতির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

প্রজাপতি প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রজাপতির বিচিত্র রঙ মানুষের মনের ওপরও দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ‘বাংলাদেশের প্রজাপতি’ নিয়ে সুন্দর একটি বই লিখেছেন পরিবেশবিদ ড. আ ন ম আমিনুর রহমান। তিনি লিখেছেন, ‘প্রজাপতির মতো এত সুন্দর পতঙ্গ পৃথিবীতে আর আছে কি! কল্পনায় যত রং ভাবা যায়, তার সব রঙেরই প্রজাপতি থাকা সম্ভব। বাহারি কারুকাজযুক্ত নিরীহ পতঙ্গগুলোকে পৃথিবীর সব জায়গাতেই কমবেশি দেখতে পাওয়া যায়। ওরা যখন নরম ডানায় ভর করে কারও পাশ দিয়ে উড়ে যায়, তখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে না তাকিয়ে কি থাকা যায়? প্রজাপতি আনন্দ, ভালোবাসা ও রূপান্তরের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়াও এরা প্রকৃতির সুস্থতারও নির্ণায়ক।’

সূত্রমতে, পৃথিবীতে প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বাংলাদেশে ৫০০ থেকে ৫৫০টি প্রজাতি থাকতে পারে, যার মধ্যে চারশ থেকে কিছু কম প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। বাংলাদেশে তিনটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে- চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়, গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে এবং গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। অনেক দর্শনার্থী পার্কে গিয়ে প্রজাপতি দেখে আনন্দ পান। কিন্তু আমরা চাই, সারা দেশেই প্রজাপতির সহজ বিচরণ নিশ্চিত করা হোক। প্রজাপতি বাঁচাতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ