Views Bangladesh Logo

নার্সদের কর্মপরিবেশ উন্নত করুন

রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকের পাশে থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে সেবা দিয়ে যান নার্সরা। তারা ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে হাসপাতালে রোগীর সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনের তুলনায় ৭৬ শতাংশ কম নার্স দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। আবার যারা আছেন, তাদের সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী নার্স নিয়োগ ও তাদের মানোন্নয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মে, চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হতে হবে ১ দশমিক ৩, অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত তিনজন নার্স থাকতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) নিবন্ধিত দেশে চিকিৎসক রয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার। সেই অনুযায়ী দেশে নার্স প্রয়োজন ৩ লাখ ২৪ হাজার। তবে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে কর্মরত সরকারি নার্স মাত্র ৪২ হাজার ৩৩০ জন। সারা দেশে নিবন্ধিত নার্স আছেন ৭৭ হাজার ৮৩৮ জন, যা চাহিদার তুলনায় বেশ কম। এতে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নার্সিং পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নার্সিং শিক্ষার উন্নত মানের কারিকুলাম তৈরি হয়নি। এক নার্সের তত্ত্বাবধানে থাকেন ১০ জনের বেশি রোগী। চাইলেও মানসম্মত সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাগত উৎকর্ষ সাধন ও দায়িত্বশীল হলে বর্তমানে নিযুক্ত নার্স দিয়ে আরও ভালো সেবা পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং নার্সিং কাউন্সিলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

হাসপাতালের সেবার বিষয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ আছে, নার্সদের কয়েকবার ডাকলেও আসেন না, আবার রোগীকে ওষুধ খাইয়ে দিতেও তাদের আপত্তি। নার্সদের এ ধরনের আচরণ অপেশাদার। মূলত জনবলসংকটের কারণে একজন নার্সকে অনেক রোগী সামলাতে হয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অ্যাটেনডেন্ট। রোগীর তুলনায় অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে নার্সদের বেশি কথা বলতে হয়। এসব কারণে নার্সরা রোগীর চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে যদি একজন নার্সকে দু-তিনজন করে রোগী সামলাতে হতো, তাহলে কাজের পরিবেশও ভালো থাকত।

২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৮৬ শতাংশ নার্স অনুপযুক্ত পরিবেশে কাজ করছেন। তবু কর্মজীবনে পদোন্নতি পান না ৭০ শতাংশ নার্স। অতিরিক্ত কাজের চাপ, প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে পেশাগত চাপ তৈরি হয়, যা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে নার্সিংয়ে শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণে পারিবারিক শিক্ষারও অভাব রয়েছে। নার্সিং পেশায় আসা উচিত সেবার লক্ষ্য নিয়ে। তবে আমাদের দেশে যারা আসছেন, তারা চাকরির লক্ষ্য নিয়ে আসছেন। তাই যারা এ পেশায় আসতে চান তার আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জীবনী পড়তে পারেন।

এমতাবস্থায় নার্সদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে যেমন ঘাটতি পূরণ করা জরুরি, তেমনি নার্সদের এ পেশায় আসার আগে জেনে বুঝে আসাটাও দরকার। কারণ নার্সিং পেশা অন্য সব পেশার মতো নয়। এখানে মানুষের জীবন-মৃত্যু জড়িত। তাই ভালোমানের নার্স তৈরি করা না গেলে ভালো সেবা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি ভুলে গেলে চলবে না, রোগীদের মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতের জন্য নার্সদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ