Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

দেশে ডাটা সংযোগ এবং গুণমান বাড়াতে যেসব নীতিকাঠামো প্রয়োজন

Abu Nazam  M Tanveer Hossain

আবু নাজম ম তানভীর হোসেন

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

৭০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীকে নিয়ে মোবাইল যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে দেশ। তারপরও গুণমান এবং প্রবেশাধিকারে ডাটা পরিষেবায় অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ডিজিটাল যুগে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শক্তিশালী টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ডাটা অবকাঠামোর আরও সংস্কার, নাগরিকবান্ধব টেলিযোগাযোগ কাঠামো স্থাপন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের নির্ভরযোগ্য ডাটা সংযোগ নিশ্চিতে কাজ করছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

নিয়ন্ত্রক অস্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রস্থান
শক্তিশালী টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রণীত বিটিআরসির প্রতিবেদন বলছে, টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো নিয়ন্ত্রক অস্থিতিশীলতা। আছে আর্থিক ব্যয়, নিরাপত্তা মান, পরিবেশগত আইন, ডাটা সুরক্ষা নির্দেশিকা এবং খরচ বৃদ্ধিসহ আরও জটিল সব চ্যালেঞ্জ। লাইসেন্স খরচে বারবার পরিবর্তনও প্রভাব ফেলছে রাজস্বনীতিতে। এসবের ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি হচ্ছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। এতে টেলিযোগাযোগ খাত বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতিও।

বিটিআরসি সূত্র বলছে, এতসব অস্থিতিশীলতার প্রভাবে ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৫টি বিদেশি টেলিকম প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। আর বিনিয়োগ উন্নয়নের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) সমীক্ষা অনুসারে, গত পাঁচ বছরে দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুসারে, এসব নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা দূর করা না গেলে বিদেশি বিনিয়োগে আমাদের বার্ষিক ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে এক বিলিয়ন ডলার।

টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সিংটেল, এনটিটি ডোকোমো এবং ওয়ারিদ টেলিকমের মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্থান এবং গ্রামীণফোনের মতো কোম্পানির বিনিয়োগ হ্রাস দেশের অর্থনীতি ও টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যাবতীয় ক্ষতি প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপের দিকেই নির্দেশনা করে। ক্ষতির পরিমাণটাও সংশ্লিষ্টদের জানা থাকা দরকার’। ‘এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় টেলিযোগ ব্যবসার স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি’- সুপারিশ তাদের।

স্পেকট্রাম (ইন্টারনেট সুরক্ষা, মোবাইল ফোন একীভূত যোগাযোগ) মূল্য নির্ধারণের কৌশল ২০১১ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে বা বেশ ভর্তুকি হারে স্পেকট্রাম বরাদ্দ করেছিল সরকার। টেলিযোগাযোগে অনুপ্রবেশ এবং দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই নীতি বেশ কার্যকর হয়েছে। ১৯৯৭ সালে দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী ছিলেন মাত্র পাঁচ লাখ, ২০১১ সালে যা দাঁড়ায় ৭০ মিলিয়নে।

২০১১ সালে টু-জি এবং ২০১৩ সালে থ্রি-জি লাইসেন্স চালুর পর মূল্যকাঠামোর নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। এরপর প্রতি বছরের বাজেটে স্পেকট্রাম যুক্ত হয়, যা পরের ১৫ বছর ধরে অব্যাহত ছিল। তুলনামূলক স্পেকট্রাম মূল্য নির্ধারণ এবং ব্যান্ড দ্বারা নেট নিরপেক্ষতা

২১০০ মেগাহারটেজ: বাংলাদেশ (২০১৩): দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ নয়; ২০১৮ সালে নিরপেক্ষতার জন্য অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন টাকা)। পাকিস্তান (২০১৪): দশমিক ৩ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল) এবং শ্রীলঙ্কা (২০১৬): দশমিক ৪ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল)।

১৮০০ মেগাহারটেজ: বাংলাদেশ (২০১৮): দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ)। পাকিস্তান (২০১৬): দশমিক ২ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল) এবং শ্রীলঙ্কা (২০১৮): শূন্য দশমিক ৩ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল)।

৯০০ মেগাহারটেজ: বাংলাদেশ (২০২২): শূন্য দশমিক ৬ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ)। পাকিস্তান (২০১৬): শূন্য দশমিক ৪ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল) এবং শ্রীলঙ্কা (২০১৮): শূন্য দশমিক ২৫ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিউট্রাল)।

২৩০০ মেগাহারটেজ: বাংলাদেশ (২০২২): শূন্য দশমিক ৩ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ) এবং ভিয়েতনাম (২০২২) : শূন্য দশমিক ৩ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ)।

২৬০০ মেগাহারটেজ: বাংলাদেশ (২০২২): শূন্য দশমিক ৪ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ) এবং ভিয়েতনাম (২০২২): শূন্য দশমিক ২ মিলিয়ন প্রতি এমএইচজেড (নেট নিরপেক্ষ)।

উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য এবং পরামর্শের প্রভাব
স্পেকট্রাম মূল্যের উচ্চবৃদ্ধিও টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অপারেটরদের ওপর আর্থিক চাপ থাকায় আশানুরূপভাবে নেটওয়ার্ক প্রসারিত করতে পারেনি তারাও। এই বোঝা তাদের নেটওয়ার্ক উন্নত করার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধিক খরচ মেটাতে না পেরে বাজার থেকেই বেরিয়ে গেছে। ফলে দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়ে গেছে। উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য সরাসরি গ্রাম অঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। এতে শহর ও গ্রাম অঞ্চলের মধ্যে ইন্টারনেট সেবার বিভাজন রেখাও স্পষ্ট হয়ে গেছে।

আর এই ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট সেবায় বিভাজন মানেই বৈষম্যরেখা স্পষ্ট হওয়া- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) গবেষণা বলছে, স্পেকট্রাম ফি ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হলে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক ১০ শতাংশ বাড়বে। ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় আসবেন আরও লাখ লাখ মানুষ।

এই উচ্চমূল্য কমানোর পদ্ধতি হতে দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব ভাগাভাগি পদ্ধতির মাধ্যমে, যা কানাডা এবং ইন্দোনেশিয়ায় প্রয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এরকম হলে স্পেকট্রাম মূল্য নির্ধারণে আরও টেকসই কাঠামো দিতে পারে।

বিনিয়োগের আরও অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে আনুষঙ্গিক বাজার গড়ে তোলার দরকার, যা নিয়ন্ত্রকের বরাদ্দকৃত কম ব্যবহার করা স্পেকট্রামের আরও ভালো ব্যবহার অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

ওয়্যারলেস ডাটা নেটওয়ার্ক উন্নত করা
স্পেকট্রামের ব্যবহার উন্নত করতে শক্তিশালী ওয়্যারলেস ডেটা নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শহুরে এলাকায়, যেখানে ডাটা পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে ৷ বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার মোবাইল বেসস্টেশনে গড়ে ৪ হাজারের বেশি করে মোবাইল সংযোগ রয়েছে। এর বিপরীতে ইন্দোনেশিয়ায় ৯০ হাজার বেসস্টেশনে গড়ে ৫৫৫টি করে ৫০ মিলিয়ন, ব্রাজিলে ৭০ হাজার বেসস্টেশনে গড়ে ২ হাজার ৮৫৭টি করে ২০০ মিলিয়ন, মেক্সিকোতে ৫০ হাজার বেসস্টেশনে গড়ে ১ হাজার ৬০০টি করে ৮০ মিলিয়ন মোবাইল সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসস্টেশন থাকলেও কাভারেজের অনুপাত অন্য দেশের তুলনায় কম।

সংযোগের এই ফারাক ঘোচাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আইটিইউ অনুসারে, বেসস্টেশনের সংখ্যা ২০ শতাংশ বাড়লে ডাটা গুণমান এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে পারে ৩০ শতাংশ।

ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক উন্নত করার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অপারেটরদের মধ্যে সক্রিয় শেয়ারিং বাস্তবায়ন। বাংলালিংক এবং টেলিটকের মধ্যে এ ধরনের পাইলট প্রকল্পটি প্রতিশ্রুতিশীল পদক্ষেপ, যার মধ্য দিয়ে কার্যকর সম্পদের বাস্তবায়ন হতে পারে। এর সঙ্গে অবকাঠামো এবং সরঞ্জাম ব্যবসা থেকে রাজস্ব ব্যয় কমানো হলে নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়বে, বিনিয়োগকে উৎসাহী করবে।

টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সক্রিয় শেয়ারিং মোবাইল অপারেটরদের মূলধন ব্যয় ৩০ শতাংশ কমিয়ে সামগ্রিক নেটওয়ার্ক কর্মক্ষমতাকে উন্নত করেছে।

খণ্ডিত গেটওয়ে অপারেশন
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সেবা (আইএলডিটিএস) অসংখ্য গেটওয়ে অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফলে যথাযথ সেবা দিতে স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্ন ঘটে। দেশে এখন ১২টিরও বেশি অপারেটর লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এত বেশি অপারেটর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে জটিল করে তোলে। গ্লোবাল কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএনএস) থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনাকেও নিরুৎসাহিত করে। গেটওয়ে অপারেশনের বিভাজন দেশে টেলিকম অপারেটরদের পরিচালন ব্যয়ও বাড়িয়েছে। তারা চাইলেই সাশ্রয়ী মূল্যের পরিষেবা দিতে পারে না।

জাপানে গেটওয়ে অপারেটরদের সংখ্যা সীমিত। ফলে তারা ব্যয় সাশ্রয়ে গুণগত সেবা নিশ্চিত করতে পারে। অভ্যন্তরীণবিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, জাপান তার গেটওয়ে পরিষেবাগুলোর দক্ষ পরিচালনায় ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট পরিষেবা বাড়াতে পেরেছে।

স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের (আইএসপিএস) জন্য চ্যালেঞ্জ
ডাটা সংযোগ উন্নত করতে স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবাগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। বিশেষ করে ‘এক দেশে, এক হার’ নীতি। এই নীতি আঞ্চলিক খরচের ভিন্নতা বিবেচনা করতে পারে না। শহরাঞ্চল আর গ্রামাঞ্চলে তো একই হার হতে পারে না। এই নীতিতে ছোট আইএসপিএসগুলো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়ে। শহরের বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামের ছোট প্রতিষ্ঠানের একই হারে প্রতিযোগিতা করতে হয়। সুতরাং স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবাগুলোকে সমর্থন দিতে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনা করতে হবে। তাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। যেমনটি অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রাজিলে হয়েছে। বাংলাদেশও তাদের সফল মডেল অনুসরণ করতে পারে।

বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (বিসপা) প্রতিবেদন বলছে, দেশে মাত্র ৩৫ শতাংশ আইএসপির কাছে কার্যকরভাবে ব্রডব্যান্ড পরিষেবার পরিকাঠামো রয়েছে। এতে স্থানীয় আইএসপিতে আরও অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন বোঝা যায়। দেশে আইএসপি সহায়ক ইকোসিস্টেমেরও অভাব রয়েছে। এতেও পরিষেবার নিম্ন কর্মক্ষমতার বিষয়টি বোঝা যায়। বিটিআরসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ ব্যবহারকারী তাদের আইএসপিগুলোর সঙ্গে সংযোগ সমস্যায় ভুগছেন। তাই এ ক্ষেত্রেও জরুরি সংস্কার প্রয়োজন।

আঞ্চলিক আইএসপিগুলোকে সহজে লাইসেন্স দিতে হবে। লাইসেন্স খরচ কমাতে হবে। ট্রান্সমিশন পিওপিতে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে অর্থায়নের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।

সামাজিক বাধ্যবাধকতা তহবিলের অব্যবহার
সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে টেলিযোগাযোগে প্রবেশাধিকার দিতে কিছু সামাজিক বাধ্যবাধকতা তহবিল বরাদ্দ আছে; কিন্তু টেলিযোগাযোগ উন্নত করার উদ্দেশে এই তহবিলের যথাযথ ব্যবহার হয়নি। বিটিআরসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবকাঠামো প্রকল্পে শুরু থেকেই তহবিলের ৩০ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করা হয়েছে। আইটিইউর প্রতিবেদন অনুসারে, অনুন্নত অঞ্চলে যদি লক্ষ্যমাফিক বিনিয়োগ না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের ডিজিটাল বিভাজন বাড়তেই থাকবে। এটা অনেক নাগরিককে অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।

ব্রাজিলে এই এসওএফ সেবাটি গ্রামীণ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছেন। এই বিনিয়োগের ফলে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চার মিলিয়নেরও বেশি পরিবার ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশেও এসওএফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এতে উপকৃত হবেন। যেসব অঞ্চলে ইন্টারনেট নেই, সেসব এলাকায়ও ইন্টারনেট এসে যাবে হাতের মুঠোয়।

বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ
অস্থিতিশীল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ এবং ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয়ের কারণে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত সরাসরি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে খাতটি। বিদেশি বিনিয়োগ কমার পেছনে বিটিআরসি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) এবং দেশজুড়ে টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) উভয়ই দায়ী। ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদন বলেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ১৪ শতাংশ কমেছে। এতে টেলিযোগাযোগ খাত ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে স্থিতিশীল নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের মতো কৌশল অনুসরণ করতে হবে। তাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে। ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়ন করে উল্লেখযোগ্য এফডিআইকে উৎসাহিত করেছে। ভিয়েতনামের টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর সুনির্দিষ্ট নীতিকাঠামো বাস্তবায়নের পর বিদেশি বিনিয়োগে উত্থান ঘটিয়েছে। ফলে মাত্র দুই বছরে ব্রডব্যান্ড প্রবেশাধিকার বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ দেশজুড়ে টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াবে। পরিষেবার দাম কমিয়ে গুণমান বাড়াবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতে এফডিআই বাড়ালে পরিষেবা মানের সামগ্রিক উন্নতি হতে পারে। গ্রাহকদের জন্য মূল্য ১৫ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে৷

টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দেশের টেলিযোগাযোগ কাঠামোকে শক্তিশালী করা জরুরি। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলে ডাটা সংযোগ ও গুণমান বাড়ানো সম্ভব। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দেশের টেলিকমিউনিকেশন সেবার দৃশ্যপট উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভব, যা নাগরিকদের উচ্চমানের সেবা নিশ্চিত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সংযোগ দেবে। উদ্ভাবন ও উন্নতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথ প্রশস্ত হবে।


লেখক: পাবলিক পলিসি অ্যাডভোকেট।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ