Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ওষুধের দাম বাড়া নিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে আলুর দাম, পেঁয়াজের দাম বাড়লে যে পরিমাণ সমালোচনা হয়, ওষুধের দাম বাড়লে সে তুলনায় কথাই হয় না। এর কারণ হয়তো ওষুধ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য নয়, সবার জন্য একই ওষুধ প্রযোজ্যও নয়, তাই কখন কোন ওষুধের দাম বাড়ল, তা সবাই একযোগে জানেও না। তাই ওষুধের দাম বাড়া নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয় না বললেই চলে; কিন্তু ওষুধের দাম নিত্যদিন বেড়েই চলেছে তলে তলে। ওষুধের দাম বাড়া নিয়ে কোনো নিয়মনীতিও নেই।

ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতাই এখানে যথেষ্ট। তা ছাড়া বাংলাদেশে একটি সংস্কৃতি আছে শত বছর ধরেই, যে কোনো পণ্য কিনতে গেলে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কিছু দামদর করেন, ওষুধের ক্ষেত্রেই তা একমাত্র ব্যতিক্রম। ওষুধের দাম বলামাত্রই যেন ক্রেতা দিতে বাধ্য এসব সুযোগে ওষুধ ব্যবসায় এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে দেশে।

আজ শনিবার (৩০ নভেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জীবন রক্ষাকারী অর্ধশতাধিক ওষুধের দাম আবারও বেড়েছে। গত তিন মাসে কোনো কোনো ওষুধের দাম ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিত্যপণ্য কিনতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ এ ধাক্কা সামলাতে খাদ্যপণ্যে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদে পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মধ্যে দেখা দেবে পুষ্টি ঘাটতি।

নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে ওষুধের বাড়তি দাম চুকাতে হবে প্রাণের মূল্যে! যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কিছু ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। এর বাইরে যত ওষুধ বাজারে রয়েছে, বেশির ভাগ উৎপাদক কোম্পানির ঠিক করা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এর জন্যও কিছু প্রক্রিয়া মানতে হয় কোম্পানিগুলোকে। নতুন দরের যুক্তিসহ অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়।

সরকার আমদানি কাঁচামালের সোর্স কান্ট্রি, দর, মানসহ বিভিন্ন বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে যাচাই শেষে সমন্বয় করে; কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও এ নিয়ম মানেনি কোম্পানিগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাজারে দাম কার্যকর করে তা অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বড় বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সরকারকে চাপে রাখে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের সক্ষমতা না থাকায় অধিদপ্তরও মেনে নিতে বাধ্য হয়।

নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রাণ যেখানে হাসফাঁস করছে, সেখানে ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা আরও হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক পরিবার নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে জরুরি ওষুধ কিনতে পারেন না আমরা জানি। রোগে ভুগে মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন; কিন্তু নিরাময়ের ওষুধ কিনতে পারছেন না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। নতুন দামকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক (আইন) নুরুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কোনো কোনো কোম্পানি ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে; কিন্তু উৎপাদন খরচ কি এত বেড়েছে? আসলে এ খাতের মা-বাপ নেই।

কোম্পানিগুলো চীন থেকে কাঁচামাল এনে দেখায় শ্রীলঙ্কার। জীবনে একবার ইউরোপ থেকে আনলেও বছরের পর বছর সেটি দেখিয়ে অন্য দেশেরটি চালিয়ে দিচ্ছে। এসব দেখবে ঔষধ প্রশাসন; কিন্তু তারাও তো নির্বিকার। আমরা চাই ওষধু কোম্পানিগুলোর দিকে সরকার আরও নজর দিক। তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য বন্ধ করুক। কোন যুক্তিতে কোন ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে জবাবদিহি আদায় করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ