Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪

বিগত সরকারগুলো আমলে সংস্কৃতি অঙ্গনে ছিল লেজুড়বৃত্তি আর কর্তৃত্ববাদী শিল্পচর্চার রাজত্ব। দলীয় নেতাকর্মী আর তথাকথিত শিল্পীরাই সেখানে প্রাধান্য পেয়েছেন। দেশের সরকারি রেডিও-টেলিভিশন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সবই ছিল তাদের দখলে। অশিল্পীরাও সেখানে শিল্পী হিসেবে স্থান পেয়েছেন। এখন সময় এসেছে সংস্কৃতিঅঙ্গনকে লেজুড়বৃত্তিমুক্ত করার। সব কর্তৃত্ববাদী শিল্পচর্চার অবসান ঘটানোর।

গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মুক্ত গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ নির্মাণের দাবিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই দেশের প্রধান এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ফটকে তালা। বহু বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি কেবল সরকারি উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করেছে। যখন যে সরকার এসেছে, তার হয়ে কাজ করেছে। দ্রুত শিল্পকলা একাডেমি খুলে দিয়ে নাটকের মঞ্চায়ন, শিল্পকলা প্রদর্শনী, সংগীত আসর, নৃত্যানুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।

আলোচনায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা থিয়েটারের মঞ্চশিল্পী কামাল বায়েজীদ বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে মুক্ত ও স্বাধীন সংস্কৃতিচর্চার বিকাশ ঘটাতে হবে। সে লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিল্পচর্চাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। শিল্পের সব মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে। সব সংস্কৃতিকর্মীকে নিয়েই সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করতে হবে।

অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যদল প্রাচ্যনাটের আর্ট ডিরেক্টর আজাদ আবুল কালাম বলেন, দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে একজন সংস্কৃতিকর্মীর মূল পরিচয় হওয়া উচিত শিল্পসেবী। সরকারি প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মতো প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর সংস্কার করতে হবে। নইলে তা বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে। দলীয় লেজুড়বৃত্তির পরিবর্তে শিল্পচর্চার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সংস্কৃতি একটি দেশের আত্মার বাহন। সুষ্ঠু-সুন্দর-সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা ব্যাহত হলে এমনিতেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হয়।

আমরা দেখেছি বিগত বছরগুলোতে অনেক সংস্কৃতিকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। বাউলদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাশীল সরকারের লেজুড়বৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর বারবারই চলেছে সাম্প্রদায়িক হামলা। তার ফলস্বরূপ আমরা দেখেছি এ দেশ থেকে অনেক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। চারদিকে এখন কেবলই অপসংস্কৃতির জয়-জয়কার। বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকে ও চলচ্চিত্রেও এখনই একই অবস্থা। ভালো সংগীত, চিত্রকলা ও সাহিত্য আজ নেই বললেই চলে। এর কারণ উপযুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া উন্নত শিল্প-সাহিত্য কোনোভাবেই সৃষ্টি হতে পারে না।

বিগত বছরগুলোতে আমরা এক দমবন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। এখনো যে অবস্থার খুব পরিবর্তন হয়েছে বলা যাবে না। তবে, পরিবর্তনের ডাক পড়েছে। আমরাও এই ডাকে সাড়া দিয়ে বলতে চাই, অসুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশের সব খোলনলচে পাল্টে ফেলা হোক। এটা একদিকে যেমন নিশ্চিত করতে হবে বর্তমান সরকারকে, অন্যদিকে জনগণকেও যথার্থ সচেতন হতে হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসই দেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

চারদিকে শুরু হোক নতুনের গান, নব সৃষ্টির কোলাহল। কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরা সমবেত সুরে গাইতে চাই, ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে/মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে/আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ