Views Bangladesh Logo

রাজধানীর প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর নিশ্চিত করুন

রাজধানীবাসীর অনেকেই বাড়ির সঠিক ঠিকানা দিতে পারেন না। কোনো প্রয়োজনে ঠিকানা দিতে গেলে তাদের লিখতে হয় ‘অমুক মসজিদের গলি’, ‘তমুক মার্কেটের পাশের রাস্তা’ ইত্যাদি। এর কারণ অনেক বাড়ির হোল্ডিং নম্বর নেই। হোল্ডিং নম্বর না থাকলে শুধু সঠিক ঠিকানা প্রদান নয়, জমির নামজারি, খতিয়ান, ট্যাক্স প্রদান অনেক কিছুতেই সমস্যা হয়।

অনেক সময় পাসপোর্ট-ভিসা করতে গেলেও সমস্যা হয়; কিন্তু রাজধানীর এক-তৃতীয়াংশ বাড়ির হোল্ডিং নম্বর নেই। ফলে একদিকে বসবাসকারীরা যেমন অনেক নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি রাষ্ট্রও নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গতকাল রোববার (১০ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে ২০ দিনব্যাপী পৌরকর মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার মেলার উদ্বোধনী আয়োজনে ডিএনসিসির প্রশাসক মো. এজাজ সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর ৩৬ শতাংশ মানুষের বাসার হোল্ডিং নম্বরই নেই। এ ছাড়া অনেক করপোরেট অফিস ঠিকমতো হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় না। রাজধানীর কিছু আবাসিক এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ডিএনসিসি পায় না।

সবাই যদি সঠিকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করত তাহলে নগরবাসীকে আরও উন্নত সেবা দেওয়া যেত। শতভাগ হোল্ডিং নম্বর না থাকলে তাকে পরিপূর্ণ আধুনিক মহানগর বলা যায় না। একটি আধুনিক মহানগরে আবাসিক ব্যবস্থা, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ও পরিবহন ব্যবস্থার একটি সুসমন্বয় থাকবে, বিচারব্যবস্থা ও পৌরসভার অধীনে সবরকম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে; কিন্তু ঢাকা ‘মহানগর’ হিসেবে নামেমাত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে অনেক নাগরিক এখনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

তা ছাড়া রাজধানী ঢাকা দুটি সিটি করপোরেশনে বিভক্ত হওয়ার কারণে এখানে এক ধরনের বৈষম্য দেখা দিয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের মানুষ একই রকম সুবিধা পান বলে বলা যাবে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ৮২ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৪৭ দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার।

২০১১ সালে যখন থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুটি সিটি করপোরেশনে ভাগ করা হয় তখন থেকেই এই বৈষম্য চলমান। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দুই সিটি করপোরেশনে মেয়রের বদলে দুজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা পুরোনো ধারাতেই কিছু কাজ করছেন, নতুন কোনো উদ্যোগ এখনো তাদের কার্যক্রমে চোখে পড়েনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ওয়ার্ড থেকে কমিশনাররা পালিয়েছেন, নতুন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়নি, ফলে লোকবলের অভাবে তারা যথাসাধ্যভাবে কাজও করতে পারছেন না।

নাগরিক সেবা দিতে হলে জনবল প্রয়োজন। এ জন্য জনবল নিয়োগ দিতে হবে। জনবল নিয়োগ দিলে তাদের বেতন দিতে হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স ধরা গেলে কিছু সরকারি আয় হয়, আবার ট্যাক্স ধরতে গেলেও হোল্ডিং নম্বর আগে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে মো. এজাজ বলেন, কিছু কিছু জায়গায় যদি ট্যাক্স ধরতে পারতাম তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যেত। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে রাজি হয়েছে।

অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোল্ডিং ট্যাক্স বাকি। অনেক করপোরেট অফিস তারা মামলা করে হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ফেলেছে। এই কর মেলায় তারা যদি ট্যাক্স দেন তাহলে তারা রিবেট পাবেন। এখন ট্যাক্স না দিলে ভবিষ্যতে তাদের আর রিবেট সুবিধা দেওয়া হবে না। হোল্ডিং ট্যাক্স না দেয়ার মামলার শাস্তি অনেক কঠোর।

আমাদের প্রত্যাশা, সরকার রাজধানীবাসী প্রত্যেকের বাড়ির হোল্ডিং নম্বর নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি তাদের নাগরিকসেবা বৃদ্ধি করে তাদের কাছ থেকে যথাপ্রাপ্য কর আদায় করে এই শহরকে বাসযোগ্য মেট্রোপলিটন সিটি হিসেবে গড়ে তুলবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ