শেয়ারবাজারে দরপতন
বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করুন
পুঁজিবাজার একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দক্ষতা প্রকাশ করে। জনগণ, সরকার ও পুঁজিপতিদের মধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কতিপয় রাঘববোয়ালদের বারবার দায়ী করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার জন্য অনেক ধরনের আলাপ-আলোচনা হয়েছে, অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে; কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি।
কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বাজার চাঙা করতে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা; কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাও প্রায় ৯ মাস হয়ে গেল। আর এ সময়ে ঘটল গত এক যুগের মধ্যে শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ পতন। দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য যা খুবই হতাশাজনক খবর।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বুধবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৩টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৮১টিই দর হারিয়েছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হারিয়ে ৪৮০২ পয়েন্টে নেমেছে। হার বিবেচনায় গতকালের পতন ২০১৩ সালের ২৩ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও দরপতন হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দরপতনের পেছনে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। গতকাল পাকিস্তানের শেয়ারবাজারেও বড় দরপতন হয়েছে। ভারতের শেয়ারবাজারে শুরুর দিকে পতন হলেও শেষ পর্যন্ত সূচক সামান্য বেড়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো শেয়ারবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। নানা কারণে আস্থাহীনতায় ক্রমাগত দরপতনের ধারায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের বাজার।
ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের আলামত দেখা দিতেই বাংলাদেশের খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর এমনিতেই দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বন্ধ, এখন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আশঙ্কায় বিনিয়োগ আরও স্থবির দশায় পতিত হবে। এমনটা চলতে থাকলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। শুধু কারসাজি বা বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করে বসে থাকলে হবে না, এর থেকে উত্তরণের উপায়ও বের করতে হবে।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শক্তিশালী না হলে শেয়ারবাজার কখনো ঘুরে দাঁড়াবে না। যদি সামনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জিডিপি বাড়ে ও মূল্যস্ফীতি কমে তাহলে পুঁজিবাজার সামনে ভালোর দিকে যাবে। কারণ এর প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়বে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ জরুরি। গত এপ্রিলের শুরুতে খুবই জাঁকজমকভাবে বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেল, অনেক আশার কথা শোনা গেল; কিন্তু দুমাস হয়ে গেল এখনো তার কোনো ফলাফল চোখে পড়ল না। তাই শুধু জনতুষ্টির কথা নয়, কার্যকরী উদ্যোগ খুবই জরুরি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে