ছিনতাই
মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি হাতে নিয়ে ছিনতাইকারীরা এক তরুণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে- এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের মনে প্রবল আতঙ্ক এসে ভর করেছে। গত মঙ্গলবার (২৭ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঘটনাটি ঘটেছে ১৮ মে বিকেলে। ঘটনাস্থল রাজধানীর মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলি। ছিনতাইয়ের শিকার তরুণের নাম আবদুল্লাহ। তার বাড়ি কুমিল্লায়। ছিনতাইয়ের এ ঘটনায় গত রোববার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয়ের তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন আবদুল্লাহ। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত তিন ছিনতাইকারীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
কয়েক মাস আগে যখন ঢাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল তখন সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেরোতে ভয় পেতেন আর এখন দিন-দুপুরেও বেরোতে ভয় পান। বিশেষ করে নারীরা এখন খুব প্রয়োজন না থাকলেও ঘর থেকে বেরোন না বলে জানিয়েছেন। বিশেষ প্রয়োজনে বেরোতে হলেও সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকেন কখন কী হয়ে যায়। দেশের এহেন পরিস্থিতে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। দেশে কি আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু আছে? পুলিশ কী করছে? আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে?
একটি-দুটি ঘটনা নয়। গত রোববার রাতেও রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন গুদারাঘাট এলাকার প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে। গত ২৭ মে প্রকাশিত হয়েছে আরও এক ভয়াবহ ঘটনা। রাজধানীর মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে এক ব্যবসায়ীর ২২ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরের এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে খুন-ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকরা প্রচণ্ডরকম উদ্বিগ্নতা জানিয়েছেন। পুরো দেশজুড়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধীরা। প্রকাশ্যে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, সশস্ত্র মহড়াসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে ঘটনা ঘটছে। মানুষকে জিম্মি করে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতাবোধ ও আতঙ্ক।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে ১ হাজার ২৪৬টি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ২৯৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০টি, মার্চে ৩১৬টি ও এপ্রিলে ৩৩৬টি হত্যার ঘটনায় মামলা হয়। ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া এই চার মাসে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৫টি। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে ৪১৪টি, মার্চে ৪৩৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ৪২০টি ও জানুয়ারিতে ৫০৪টি মামলা হয়।
অপরাধ-বিশ্লেষকরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিই এর জন্য দায়ী। তা ছাড়া দেশে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে। সামনে ঈদুল আজহা, এ উপলক্ষে অনেকে অনেক টাকা-পয়সা নিয়ে ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। মানুষ যে স্বস্তিতে কোথাও বেড়াতে যাবেন তারও উপায় নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশানুরূপ উন্নতি না হলে এ থেকে উত্তরণের পথ নেই। এরকম চলতে থাকলে দেশে এক চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা অর্থনীতিসহ সামাজিক সমস্ত খাতকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করুন। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তা না হলে অন্তর্বর্তী সরকার কঠিনভাবে সমালোচিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে