ছিনতাই বাড়ছে
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
দেশের নানা জায়গায় হঠাৎ করেই খুব ছিনতাই বেড়ে যাচ্ছে, তাতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গত দুদিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আলো নিভলেই জেঁকে বসছে ছিনতাই আতঙ্ক। কোথাও দিন-দুপুরেই ছিনতাই হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরেই ছিনতাই চলছে বেশি। ঢাকার মোহাম্মদপুরে চলছে সিরিজ ছিনতাই।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির টাকা ছিনতাই, পথচারী, রিকশাআরোহী যাত্রীদের থামিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া গণপরিবহনে বসে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, ব্যাগ, ল্যাপটপসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসও ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারীরা দেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে। প্রকাশ্যে অটোরিকশা ছিনতাই, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা বহনকারী গাড়িতে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রাণঘাতী ছিনতাইয়ের ঘটনাও রয়েছে অহরহ। এ ছাড়া ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আহত হচ্ছেন শত শত মানুষ। পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, দেশে ১০ হাজারের বেশি ছিনতাইকারী ও ডাকাত রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের সংখ্যা বেশি।
প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ ছিনতাইকারী সংখ্যা বাড়ল কেন? একটা উত্তর হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায়। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও অনেকটাই নিষ্ক্রীয়। এমন কী ছিনতাই দমনে মুহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেও ছিনতাই প্রতিরোধে ‘আর্মি ব্যর্থ’ বলে অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জিয়াউল হক।
সংবাদমাধ্যমকে তিনি নিজের ব্যর্থতাও স্বীকার করে ছাত্র-ছনতার সহযোগিতা চেয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, অবশ্যই ছিনতাই প্রতিরোধে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ-সচেতনতা জরুরি; কিন্তু এটা কি ছাত্র-জনতার কাজ? ছিনতাই দমন করতে গিয়ে তারা আহত হলে তার দায়ভার কে নেবে? অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীর মোকাবিলা তারা কীভাবে করবে?
হঠাৎ ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় যে কারণ, তা হলো সীমাহীন বেকারত্ব, এবং দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। অসংখ্য মানুষ এখন দৈনন্দিক প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন; কিন্তু এটাকে ধামাচাপা দিয়ে অনেকে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পটপরির্তনকে চিহ্নিত করছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশে এক অনিশ্চিত পরিবেশ চলছে এটাও ঠিক। এখনো অনেক বুঝতে পারছে না ভবিষ্যৎ কী হবে। ফলে অনেকে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে রাখছেন। এই পরিস্থিতিতেও অনেক মৌসুমি বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তিতে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
এর জন্য দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ঠিক করতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, ছিনতাই বন্ধ করুন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করুন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করার জন্য যা প্রয়োজন আমরা চাই বর্তমান সরকারসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল অতি শিগগিরই তা করবে। তা না হলে আমাদের সবার সামনেই সমূহ বিপদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে