মামলার জট কমিয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন
আইনি জটিলতা ও বিচারব্যবস্থার ধীরগতির কারণে মামলা আটকে থাকা পুরোনো কোনো বিষয় নয়। সব দেশেই বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মামলা আটকে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশেও অনেক মামলা আটকে থাকে। ভারতে ৩০ বছরের অধিক পুরোনো মামলা আটকে আছে কয়েক হাজার; কিন্তু বাংলাদেশের মতো অবস্থা পৃথিবীতে বিরল। ছোট একটি দেশে জট পাকিয়ে আছে ৪৪ লাখ মামলা! কবে এসব মামলার নিষ্পত্তি হবে কেউ জানে না।
গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে মামলাজট বেড়েই চলেছে। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণের সময় মামলা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার, যা এখন ৪৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এই জট নিরসনে দেড় দশকে বিচার-সংশ্লিষ্ট কিছু আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হলেও সরকারের উদাসীনতায় তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে, মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত আওয়ামী লীগ সরকার ও বিচার বিভাগের কিছু উদ্যোগের কারণে আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়লেও তা যথেষ্ট ছিল না। মামলা দায়েরের তুলনায় সেই হার ছিল কম। ভূমি-সংক্রান্ত কিছু মামলা দুই-তিন দশক ধরে আদালতে বিচারাধীন। ফৌজদারি মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক মামলা বেশি। দেশে বিদ্যমান ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থা শত বছরের পুরোনো।
দেওয়ানি কার্যবিধির বয়স ১১৬ ও ফৌজদারির ১২৬ বছর। সাক্ষ্য আইনের বয়স ১৫২ বছর। আইনজীবীরা বলছেন, পুরোনো এই বিচার ব্যবস্থা বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অন্তরায়। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি শতাব্দীর প্রাচীন আইন সংস্কার ও নতুন আইন করা প্রয়োজন। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের কিছু ধারা সংশোধন করাও জরুরি।
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনার বিষয়ে গত বছরের আগস্টে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন দাখিল করে আইন কমিশন। প্রতিবেদনে মামলাজটের পাঁচটি মূল কারণ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো পর্যাপ্ত বিচারক না থাকা, বিশেষায়িত আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ না হওয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, জনবলের অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে চার বছরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার বিচারক নিয়োগ এবং আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২০১২ সালেও মামলাজট নিরসনে ফৌজদারি আইন ও দণ্ডবিধিসহ পুরোনো আইনগুলো সংশোধন, পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করে এই কমিশন। তবে অধিকাংশ সুপারিশই বাস্তবায়ন হয়নি।
আমরা চাই, দেশের বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে মামলার জট খোলা হোক। প্রয়োজনে আরও বিচারক নিয়োগ করা হোক। আদালতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক। বর্তমান সরকার সংস্কারসহ এ দিকে জরুরি সুনজর দেবে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আইনবিদ আসিফ নজরুল আছেন, বর্তমানে তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। মামলার জট নিরসনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন- এটাই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে