শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানী নিশ্চিত করুন
বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড; কিন্তু বাংলাদেশে সেই মেরুদণ্ড গড়ার কারিগরদের বড় করুণ অবস্থা। না আছে উপযুক্ত সম্মান, না আছে উপযুক্ত সম্মানী। এ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে কথা চললেও দিন দিন তাদের নাজেহাল অবস্থা যেন বাড়ছে। তার সাম্প্রতিক নজির গণঅভ্যুত্থানের পরও দেখা গেছে। শিক্ষকদের গায়ে হাত পর্যন্ত তোলা হয়েছে। অসংখ্য স্কুলের শিক্ষক চাকরি স্থায়ীকরণ ও বেতন বাড়ানো দাবিতে রাজপথে নামলেও তাদের কথায় কর্ণপাত করা হয়নি।
সমাজে শিক্ষকদের যথোপযুক্ত সম্মান ও সম্মানী নেই বলে স্নাতকসম্পন্ন অনেক শিক্ষার্থী এখন আর শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন না। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সিভিল প্রশাসনের চাকরির চেয়ে শিক্ষকতা পেশা নেহাতই এক স্বেচ্ছাসেবী কাজের মতো। বেতন কাঠামোর দিক দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতন এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের মতো।
বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে যে বেতন পান সে মোতাবেক মূল বেতন ১১ হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ সর্বসাকল্যে পান সাড়ে ১৯ হাজার টাকা। দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। ডলার হিসেবে মাসিক ১৭০ ডলারের মতো। মালদ্বীপে একজন শিক্ষকের গড় মাসিক বেতন ৯৫৩ ডলার, ভারতে তা ২৮৪ ডলার, পাকিস্তানে ২০৬ ডলার। সুতরাং বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থা অনুমান করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণি পাস একজন গাড়িচালকও এর চেয়ে বেশি বেতন পান।
এই বেতন কাঠামোর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই একজন শিক্ষকের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব নয়। শিক্ষকের জীবনমান উন্নত না হলে সামগ্রিক শিক্ষারও কোনো উন্নতি হবে না। বাংলাদেশের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুলের অনেক শিক্ষক ফিরে গিয়ে টিউশনি করে, কোচিং সেন্টার চালিয়ে বা ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালান। গ্রামাঞ্চলে অনেক কৃষিকাজ করেন। শহরে অনেকে ফার্মেসি, মোবাইল দোকান চালান। তাহলে সারা দিনে তার অবসর কোথায়? একটু অবসর না পেলে একটু বাড়াতি পড়াশোনা তিনি কখন করবেন? পড়াশোনা না করলে আধুনিক চিন্তার সঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত হবেন?
সুতরাং গোড়ায় গলদ, সমস্যা অনেক। মূল সমস্যা স্বল্প বেতন। দেশের শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ে বর্তমানে অনেক কথা হচ্ছে। শিক্ষা কমিটি গঠন হচ্ছে। পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হবে। ভালো কথা; কিন্তু শিক্ষকদের মান বাড়ানো, দক্ষতা বাড়ানো এবং বেতন বাড়ানো নিয়ে এখনো তেমন কোনো কথাবার্তা শোনা যায়নি। শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক সংগঠক বলেছেন, শিক্ষকদের বেতনের সমস্যা সমাধান না করলে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণই অপূর্ণ থেকে যাবে।
তাই আমরা চাই, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রথম শর্ত ও চিন্তাই থাকুক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো, যাতে তারা সুন্দরভাবে জীবন নির্বাহ করতে পারেন। কোমলমতি শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে আন্তরিক হতে পারেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে